খেয়া’ কবিতায় কবির বাস্তববোধের পরিচয় দাও

খেয়া' কবিতায় কবির বাস্তববোধের পরিচয় দাও
খেয়া’ কবিতায় কবির বাস্তববোধের পরিচয় দাও

ভূমিকা 

রবীন্দ্রকাব্য ধারার দ্বিতীয় পর্বে লিখিত ‘চৈতালি’ কাব্য থেকে পাঠ্য ‘খেয়া’ কবিতাটি সংকলিত হয়েছে। নানা উত্থানপতনে ভরা মানবসভ্যতার চিরন্তন প্রবাহধারার স্বরূপ অন্বেষণ করেছেন কবি আলোচ্য কবিতায়; আর সেই সূত্রেই কবির গহন মনের অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলি প্রকাশিত হয়েছে।

অনন্ত জীবনপ্রবাহ

অখণ্ড নিসর্গানুভূতিকে পূর্ণতা দিয়েছে মানুষ প্রকৃতি-প্রেম- সৌন্দর্য; সেই তৃপ্ত অনুভব নিয়ে কবি দৈনন্দিন জীবনের মাঝেই অনন্ত জীবনপ্রবাহকে অবলোকন করেছেন। প্রতিদিনের জীবনযাপনের পঙ্গুতা-দৈনতায় পীড়িত কবিমন শেষত মর্ত্যপ্রেমেই ফিরে এসেছেন। বৈরাগ্যবিমুখ জীবনপ্রীতিই তাঁর আরাধ্য; আর সে সাধনার শেষে একাকী নৈঃশব্দ্যের মাঝে, সমাহিত প্রকৃতির শান্ত কোলে জীবনকে দেখেছেন নদীস্রোতের রূপকে।

বাস্তবতা বোধ

জীবন বাস্তবতাকে কবি আবেগশূন্য দৃষ্টিতে প্রকাশ করেছেন নিসর্গসৌন্দর্যের মাঝে দাঁড়িয়ে। অতীতচারী হয়ে অখণ্ড মানবসভ্যতার প্রবাহধারাকে মূর্ত করেছেন তিনি। আধ্যাত্মিক জীবন উপলব্ধির মাধ্যমে রবীন্দ্র-ভাবনায় উৎসারিত হয়েছে বাস্তব জীবনচিত্রের মধ্যেই বিমূর্ত এক ভাবনা। এখানে রোমান্টিক ভাবব্যাকুলতা প্রাবল্য পায়নি; বরং বহুকালের সাধনায় নিমগ্ন এক ঋষির বাণীরুপ হয়ে উঠেছে এই খেয়া। সেই শুচিশুভ্র অনুভবে কবি বলেছেন-

“এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে-দ
কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে।।”

উপসংহার 

ভাববাদী কিংবা মায়াবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশ্রয় দেননি কবি, বরং জীবনের অখণ্ড প্রবাহধারাকে অবলোকন করেছেন নিসর্গসৌন্দর্য বৈভব আর মর্ত্যপ্রীতির মাধ্যমে। তাই ইতিহাসকে কবির মনে হয়েছে বিজয়ী আর বিজিতের হিংসা-হননের রক্তাক্ত অধ্যায়। সেই ধ্বংসের, সর্বনাশের বিক্ষুব্ধ তরঙ্গ থেকে বহু যোজন দূরের এই গ্রাম দুটিতেই তিনি প্রকৃত মানবতার প্রবাহকে খুঁজে পেয়েছেন। সংস্কৃত কাব্যসাহিত্যের ভাণ্ডার থেকে আহূত বলে ‘খেয়া’ কবিতায় চিত্রিত সৌন্দর্যপট সুগভীর আত্মোপলব্ধিতে রঞ্জিত হয়ে রয়েছে।

Leave a Comment