বৌদ্ধ মতে কর্মবাদ কী? বৌদ্ধদের কর্মবাদ সংক্ষেপে আলোচনা করো

বৌদ্ধ মতে কর্মবাদ কী? বৌদ্ধদের কর্মবাদ সংক্ষেপে আলোচনা করো
বৌদ্ধ মতে কর্মবাদ কী? বৌদ্ধদের কর্মবাদ সংক্ষেপে আলোচনা করো

বৌদ্ধ মতে কর্মবাদ

বৌদ্ধ মতে, কর্ম ও কর্মফলের মধ্যে একপ্রকার কার্যকারণ সম্পর্ক বিদ্যমান। প্রত্যেকটি সকাম কর্ম তাই কোনো-না-কোনো ফল উৎপন্ন করে থাকে। মানুষকে এই কর্মফল ভোগ করতেই হয়। কর্মফল ভোগ এ জন্মেও হতে পারে, আবার তা পরজন্মেও হতে পারে।

বৌদ্ধদের কর্মবাদ সংক্রান্ত আলোচনা

যেমন কর্ম তেমনি ফল

প্রতীত্যসমুৎপাদ থেকে নিঃসৃত বৌদ্ধদের আর- একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হল কর্মবাদ। কর্মবাদের মূল বক্তব্য হল-যেমন কর্ম করা হবে, তেমনি ফল লাভ হবে। কর্মফল জীবকে নিজেকেই ভোগ করতে হয়। কর্মফলের ভোগ এজন্মেও হতে পারে, আবার তা পরজন্মেও হতে পারে। তবে কর্মফল কখনোই বিনষ্ট হয় না। কর্মফলের ভোগ তাই মানুষের নৈতিক জীবনের একটি সাধারণ নিয়ম। এই নিয়মকে কেউই উপেক্ষা করতে পারে না।

কর্মবাদের ভিত্তি

মানুষে মানুষে পার্থক্যই বৌদ্ধদের কর্মবাদে বিশ্বাসী করে তুলেছে, অর্থাৎ মানুষে মানুষে ভেদই হল কর্মবাদের ভিত্তি। এ প্রসঙ্গে নাগসেন বলেন যে, মানুষে মানুষে নানা বিষয়ে পার্থক্য আছে। এই সমস্ত পার্থক্যই মানুষকে কর্মবাদে প্রলুব্ধ করে। মানুষে মানুষে পার্থক্যের আপাতদৃষ্ট কোনো কারণ নেই। কিন্তু কর্ম অনুযায়ী ফলের যে ভোগ সেই অমোঘ নিয়মকে মেনে নিতেই হয়। স্বাভাবিক ফলশ্রুতিতে তাই বৌদ্ধরা কর্মবাদকে নৈতিক নিয়ম হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছেন।

সকাম ও নিষ্কাম কর্ম: 
বৌদ্ধ দর্শনে কর্ম দু-প্রকার-সকাম কর্ম ও নিষ্কাম কর্ম। কামনাবাসনাজনিত সকাম কর্মেরই ফল আছে। নিষ্কাম কর্মের কোনো ফল নেই। সকাম কর্মের ফলই মানুষকে জন্ম থেকে জন্মান্তরে ঘোরায়। সকাম কর্ম আবার কায়িক, বাচিক ও মানসিকরূপে তিন প্রকার হতে পারে। এই প্রত্যেক প্রকার সকাম কর্মের পিছনেই কর্মফুল বিদ্যমান। কোনো ব্যক্তি যদি নিজে প্রাণীহত্যা করে, তবে তা কায়িক কর্মের পর্যায়ভুক্ত হয়। কিন্তু কেউ যদি নিজে প্রাণী হত্যা না করে অপরকে প্রাণী হত্যার জন্য আদেশ দেয়, তখন তা বাচিক কর্মের আওতাভুক্ত হয়। আর কোনো ব্যক্তি যদি নিজে প্রাণী হত্যা করতে না পারার জন্য মনে অনুতাপ করে তবে তাকেই বলা হয় মানসিক কর্ম।

কর্মফলের চারটি স্তর

বৌদ্ধ দর্শনে কর্মবাদের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মফলের চারটি স্তরের উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলি হল- বিশুদ্ধ কর্মের জন্য বিশুদ্ধ ফলই পাওয়া যায়, অশুদ্ধ কর্মের জন্য অশুদ্ধ ফলই পাওয়া যায়,ও অশুদ্ধ- বিশুদ্ধ কর্মের জন্য আংশিক শুদ্ধ ও আংশিক অশুদ্ধ ফল পাওয়া যায় এবং • শুদ্ধও নয় আবার অশুদ্ধও নয়-এমন কর্ম নিজে নিজেই ক্ষতিকর।

কর্মবাদের ধারণায় জন্মান্তরবাদ

কর্মবাদের ধারণার সঙ্গে জন্মান্তরবাদের বিষয়টি অত্যন্ত ঘনিষ্টভাবে জড়িত। কারণ, কর্মবাদের যুক্তিসংগত পরিণতিই হল জন্মান্তরবাদ। বৌদ্ধরা দাবি করেন যে, জীবকে তার কৃতকর্মের ফলভোগ করার জন্য পরের জন্ম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। অতীত জীবনের কর্মফল বর্তমান জীবনে, বর্তমান জীবনের কর্মফল ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য সঞ্চিত থাকতে পারে। সুতরাং দাবি করা সংগত যে, মানুষের অতীত জীবন, বর্তমান জীবন এবং ভবিষ্যৎ জীবন সবই কর্মফল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

Leave a Comment