রক্তপ্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া ওঠে’-সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো

রক্তপ্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া ওঠে'-সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো
রক্তপ্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া ওঠে’-সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো

প্রসঙ্গ

‘খেয়া’ কবিতায় প্রায় মধ্যাংশে মানুষের পাশবিক প্রবৃত্তির বীভৎসতাকে প্রকাশ করতে রবীন্দ্রনাথ প্রশ্নে প্রদত্ত পঙ্ক্তিটি প্রসঙ্গ ব্যবহার করেছেন। ‘চৈতালি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত আলোচ্য কবিতায় কবি দেখেছেন রাজশক্তির রণহুংকারে, তাদের জান্তব শক্তিদর্পে কেঁপে উঠেছে পৃথ্বীতল-সর্বনাশের খেলায় তারা মেতে উঠেছে বারবার।

ব্যাখ্যা

অতীতচারী কবি ইতিহাসের ঘটনাক্রমে দৃষ্টিপাত করে দেখেছেন মানবসভ্যতার প্রবাহধারা যতবার অবরুদ্ধ হয়েছে স্বার্থান্ধ ক্রোধান্মত্ত মানুষের হিংস্র ছোবলে- ধরণীতল ততবারই গেছে রক্তে ভেসে। মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করে এইসব শক্তি সভ্যতার বুকে অশনিসংকেত নিয়ে হাজির হয়েছে। বিজয়ী আর বিজিতের তরবারিতে রক্তাক্ত হয়েছে সভ্যতার ইতিহাস। কিন্তু তাদের দম্ভ, দর্প চিরস্থায়ী হয়নি। কবি বলেছেন–

‘সোনার মুকুট কত ফুটে, আর টুটে!’


অমরত্বের প্রত্যাশায় অবিসংবাদী হবার বাসনায় স্বার্থান্ধ মানুষের দল মসির সাধনা করে না, আপন করে অসিকেই। সেই নিষ্ঠুর পাষাণ হৃদয় সৃষ্টির তাড়না অনুভব করে না, ধ্বংসের উল্লাসে মেতে ওঠে বারবার। তথাপি বৃহৎ জগৎ তাদের মনে রাখে না, তারাও মানবসভ্যতায় রেখে যায় না কোনো অবদান; বরং তারা এ সভ্যতার গতিকে রুদ্ধ করতে চায় বলে তারা সভ্যতার কীটে পরিণত হয়। ফলত সোনার মুকুটের ঔজ্জ্বল্য ও গাম্ভীর্য অর্থহীন হয়ে পড়ে।

উপসংহার

হাস্যকর অর্থহীন ধ্বংসাত্মক সে রক্তের খেলার মাঝে কবি জীবনের ইতিবাচকতাকে খুঁজে পাননি; বরং বৃহৎ সভ্যতার ক্ষেত্রে সেই ধূসর রক্তাক্ত ইতিহাস গুরুত্বহীন ঘটনারাজি হয়ে কলঙ্কিত করেছে মানবতাকেই।

Leave a Comment