‘এই খেয়া চিরদিন চলে নদী স্রোতে’–প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করে তাৎপর্য লেখো

'এই খেয়া চিরদিন চলে নদী স্রোতে'--প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করে তাৎপর্য লেখো
‘এই খেয়া চিরদিন চলে নদী স্রোতে’–প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করে তাৎপর্য লেখো।

প্রসঙ্গ

রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘খেয়া’ কবিতার আলোচ্য অংশে জীবনকে বৃহতের প্রেক্ষাপটে দেখবার আকুতি প্রকাশিত হয়েছে। ‘চৈতালি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত পাঠ্য এ কবিতায় কবি চিরন্তন জীবনধারার স্বরূপটিকে খুঁজতে চেয়েছেন। উত্থানপতনে, ধ্বংস-সৃষ্টিতে সমাকীর্ণ মানবসভ্যতার বিবর্তনকে স্পষ্ট করতে কবি খেয়াতরি, নদীস্রোত, যাত্রীদের উল্লেখ করেছেন প্রসারিত নিসর্গসৌন্দর্যের প্রেক্ষাপটে। মানবের সেই নিরন্তর চলন প্রসঙ্গে কবির প্রশ্নে প্রদত্ত উক্তি।

তাৎপর্য 

রোমান্টিক কবি অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি প্রসারিত করে মনশ্চক্ষে দেখেছেন মানবের অনিবার্য ও নিশ্চিত প্রবাহকে। নদীতটে একাকী বসে তিনি দুই তীরের গ্রাম দুখানি দেখেছেন, দেখেছেন খেয়াতরি করে যাত্রীদের নিরন্তর পারাপার। বিষাদঘন হৃদয়ে উদাসী কবি মানুষের খেয়া পারাপার লক্ষ করে বলেছেন–

‘কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে।।

জীবন-মৃত্যুর দ্যোতক এপার-ওপার তথা গ্রাম দুখানি থেকে মানুষ আপন ঘরে ফেরে, কেউ বা অজানা গন্তব্যে পাড়ি দেয়। কিন্তু তাদের যাতায়াতে কোনো ছেদ পড়ে না-নিরন্তর এই চলাকে কবি আলোচ্য কাব্যাংশে স্পষ্ট করেছেন।

সভ্যতার সারসত্য

জগৎসংসার সম্বন্ধে নির্মোহ থেকে কবি মানবসভ্যতার অনন্ত প্রবাহধারার স্বরূপ অন্বেষণ করেছেন খেয়া চলাচলের চিরন্তনতার মাধ্যমে। সম্মুখে খেয়াঘাট, কবি একাকী বসে উদাস নয়নে অপলকে চেয়ে আছেন সেই দিকে। যাত্রীদল পারাপার করছে এপার থেকে ওপারে, এ গ্রাম থেকে পরপারের গ্রামখানিতে। সভ্যতার সারসত্য মানবজীবনরূপ নদীবক্ষে জীবনতরিতে ভেসে চলেছে মানুষও-সে চলা শুরু হয়েছে জন্ম থেকে, চলবে আমৃত্যু। নবীনের আগমনে, পুরাতনের বিদায়ে এই চলন যেন অনন্ত। সংঘাত-সংক্ষুব্ধ ইতিহাসের প্রতি উদাসীন থেকে প্রকৃতির কোলে শান্ত সমাহিত নিরীহ গ্রাম দুখানির যাত্রীদল খেয়া নৌকার চলনকে গতিদান করে চলেছে যুগ-যুগান্তর ধরে-বিষণ্ণ কবি সভ্যতার সেই শাশ্বত রূপটি অবলোকন করেছেন হৃদয়লোকে। ‘খেয়া’ কবিতার আলোচ্য অংশে সভ্যতার সেই সারসত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

Leave a Comment