‘নোঙর’ কী ধরনের কবিতা? এ কবিতার মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় পরিস্ফুট করো। |
‘নোঙর’ কবিতার ধরন
কবি অজিত দত্তের লেখা ‘নোঙর’ প্রতীকধর্মী কবিতা। কারণ নোঙর এখানে বন্ধন বা স্থিতির প্রতীক। নোঙরের প্রতীকধর্মিতার অনুষঙ্গে নৌকা, তট, নদী-সমুদ্র, ঢেউ ইত্যাদি কথাও এ কবিতায় বিভিন্ন বিষয়ের প্রতীক হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। অন্যদিকে সমগ্র কবিতাটিকে রূপকধর্মী বলা যায়। কারণ নোঙর, নৌকা, তট ইত্যাদির প্রতীকে কবি অন্তর্নিহিত একটি বক্তব্য উপস্থিত করেছেন-যা কবিতাটির আপাত বক্তব্যের সমান্তরাল একটি অন্য স্তরের স্বতন্ত্র বক্তব্য।
কবিতার মূল বক্তব্য
‘নোঙর’ কবিতাটির আপাত বক্তব্য হল তরি নিয়ে কবি দূরের সপ্তসাগর পারে যাত্রা করতে চান, কিন্তু ‘নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে’। অবিরাম দাঁড় টেনেও কবি সেই নৌকাকে গতিশীল করতে ব্যর্থ। এই আপাত বক্তব্যের আড়ালে কবি মূলত বলতে চেয়েছেন সাংসারিক, সামাজিক মানুষ নানারূপ বন্ধনে আবদ্ধ। কবিও বাঁধা পড়ে আছেন তাঁর কর্মজগতে, দায়িত্ব-কর্তব্যের বাঁধনে। তাঁর সৃষ্টিশীল রোমান্টিক মন সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে পাড়ি দিতে চায় দূর দেশে, অসীম-অনন্ত স্বপ্নকল্পনার জগতে; কিন্তু বাস্তব তাঁকে বেঁধে রাখে। তবু জীবনভর তিনি বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যান। বন্ধনমুক্তির এই ব্যর্থতা কবিকে বিষণ্ণ করে। এই স্থবিরতা, স্থিতিশীলতাকে বিদ্রুপ করে গতির জগৎ। নিজের সৃষ্টিকে তিনি নৌকায় বোঝাই করে নিয়ে যেতে চান সপ্তসিন্ধুপারে, ছড়িয়ে দিতে চান দিকে দিকে। কিন্তু তাঁর জীবনতরি গতিহারা, কঠিন বাস্তবের নিগড়ে বাঁধা।