‘সারারাত মিছে দাঁড় টানি’-কবি ‘দাঁড় টানা’কে ‘মিছে’ বলেছেন কেন? মিছে জেনেও কবি কেন দাঁড় টানেন?

'সারারাত মিছে দাঁড় টানি'-কবি 'দাঁড় টানা'কে 'মিছে' বলেছেন কেন? মিছে জেনেও কবি কেন দাঁড় টানেন
‘সারারাত মিছে দাঁড় টানি’-কবি ‘দাঁড় টানা’কে ‘মিছে’ বলেছেন কেন? মিছে জেনেও কবি কেন দাঁড় টানেন?

দাঁড় টানাকে ‘মিছে’ বলার কারণ

কবি অজিত দত্ত ‘নোঙর’ কবিতায় বলেছেন যে তিনি মিছে দাঁড় টেনে চলেছেন। নৌকা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দাঁড় টানার প্রয়োজন। কিন্তু যে নৌকা নোঙরের সঙ্গে কাছি দিয়ে বাঁধা তার দাঁড় টেনে কী লাভ! নৌকা একটুও এগোবে না। কবির নৌকা তটের কিনারে নোঙরে বাঁধা পড়ে আছে। তিনি যতই দাঁড় টানুন সে নৌকা সচল হবে না। তাই নোঙরের কাছিতে বাঁধা নৌকার দাঁড় টানা মিছে অর্থাৎ বৃথা।

দাঁড় টানার কারণ

বৃথা আশা যেমন মরতে মরতেও মরে না তেমনই বদ্ধ নৌকার দাঁড় টানা মিছে জেনেও কবি অবিরাম দাঁড় টেনে চলেন। মানুষ নিজের পরাজয়, ব্যর্থতা বা বাসনার অপূর্ণতাকে সহজে মেনে নিতে পারে না। কবিও স্বভাবতই আশাবাদী। তাঁর রোমান্টিক ও সৃষ্টিশীল মন বাস্তবকে সহজে মানতে পারে না। সুদূর কল্পলোক তাঁকে ডাকে। তিনি সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে চলে যেতে চান দূর সমুদ্রপারে। অদৃশ্য নোঙরের মতো অদৃশ্য মায়াবন্ধন তাঁকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে। কবির বাস্তব ও সচেতন সত্তার সঙ্গে রোমান্টিক সত্তার দ্বন্দু বাঁধে। কঠিন বাস্তবকে উপেক্ষা করার জন্য তিনি অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যান। নিঃসঙ্গ-নিস্তব্ধ রাতে তাঁর কল্পনাপ্রবণ কবিসত্তা জেগে ওঠে। বাস্তব ও কল্পনার সংঘর্ষে, স্থিতি ও গতির দ্বন্দ্বে কবির চিরচঞ্চল, অতৃপ্ত মন যেন কেবলই ভাবে সেই অসীমের সন্ধান তিনি পাবেনই। মিছে জেনেও তাই কবি দাঁড় টানেন।

Leave a Comment