‘তারপর ভাঁটার শোষণ’-প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অংশটির তাৎপর্য বিচার করো

'তারপর ভাঁটার শোষণ'-প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অংশটির তাৎপর্য বিচার করো
‘তারপর ভাঁটার শোষণ’-প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অংশটির তাৎপর্য বিচার করো।

প্রসঙ্গ

উদ্ধৃত অংশটি কবি অজিত দত্ত রচিত ‘নোঙর’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। নদী ও সমুদ্রে জোয়ারভাটা লেগেই থাকে। ভাটার সময় নদী-সমুদ্রের জলসীমা অপেক্ষাকৃত নেমে যায়। ভাটা এসে শোষণ করে জলধারা। প্রাণবন্ত স্রোতের প্রবল প্রাণকে নিস্তেজ করে দেয় ভাটা। দূর সমুদ্রে পাড়ি দিতে গিয়ে কবি টের পান নোঙরে তাঁর নৌকা বাঁধা পড়েছে। সেই নৌকাকে সচল করার চেষ্টা করেন কবি। ভাটার শোষণ কবির ব্যর্থতাকেই যেন নির্দেশ করতে চায়। এই প্রসঙ্গেই কবি উদ্ধৃত অংশটি লিখেছেন।

তাৎপর্য

চাঁদ-সূর্যের আকর্ষণ-বিকর্ষণে নদীর জল বাড়ে কমে। জোয়ারের সময়ে যেমন জলস্ফীতি ঘটে, তেমনই ভাঁটার সময়ে সেই স্ফীতজল হ্রাস পায়। ভাটা যেন নদী-সমুদ্রের জল শোষণ করে প্রাণবন্ত স্রোতকে নিষ্প্রাণ করে দেয়। মানুষের জীবনেও আসে উত্থানপতন, আশানিরাশার দ্বন্দ্ব। কবি একজন সৃষ্টিশীল, ভাবুক প্রকৃতির, রোমান্টিক চেতনার মানুষ। দূর সমুদ্রপারে পাড়ি দেবার আকাঙ্ক্ষায়-উত্তেজনায় তাঁর হৃদয়ে আশা-আনন্দের জোয়ার আসে। কিন্তু যখন তিনি বুঝতে পারেন তাঁর নৌকা নোঙরে বাঁধা, দাঁড় টানা বৃথা-তখনই ভাটার শোষণের মতো তাঁর উচ্ছ্বাস নিষ্প্রভ হয়ে যায়। গতিময় উন্মুক্ত বহির্জগৎ তাঁকে হাতছানি দেয়, কিন্তু তিনি তাঁর সীমাবদ্ধ জগতে অসংখ্য বন্ধনে বন্দি থাকেন। ভাটার শোষণ তাঁর প্রবল আশাকে প্রতিহত করলেও সম্পূর্ণ নির্মূল করতে পারে না। আশায় বুক বেঁধে কবি আবার দাঁড় টানেন–

“সারারাত তবু দাঁড় টানি, 
তবু দাঁড় টানি।।”

মিছে জেনেও এই দাঁড় টানার মধ্য দিয়ে কবি যেন তাঁর ব্যর্থতাকে ভুলতে চান।।

Leave a Comment