‘স্রোতের বিদ্রূপ শুনি প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে।’- ‘স্রোতের বিদ্রুপ’ কবিকে কীভাবে ব্যথিত করেছে আলোচনা করো। |
কবির আকাঙ্ক্ষা
‘নোঙর’ কবিতায় কবি অজিত দত্ত তরি নিয়ে পাড়ি দিতে চান দূর সমুদ্রপারে। নৌকা প্রস্তুত, যাত্রা করার সময় দাঁড় বাইতে গিয়ে কবি বুঝতে পারেন ‘নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে।’ কিন্তু মন তো মানে না। তাই তিনি দাঁড় টেনে চলেন অনবরত। মাস্তুলে পাল বাঁধেন, তারা দেখে দিকের নিশানাও করে ফেলেন। অথচ নৌকা এগোয় না। ঢেউগুলি যেন অভিমানে ফুলে ফুলে ওঠে আর নৌকায় মাথা কুটে ফিরে যায় গতির দুনিয়ায়। জোয়ারভাটায় বাঁধা নদীতট। এভাবেই উত্থানপতনময় কবির জীবনতটে আকাঙ্ক্ষার নৌকাটি বাঁধা পড়ে থাকে।
কবির ব্যথা চেষ্টা
জলস্রোত গতির প্রতিভূ। সে ধেয়ে আসে, ফিরে যায় জোয়ারভাটায়। সে কবির মতো বন্দি নয়-স্বাধীনভাবে বয়ে চলে। কবি অসহায়ভাবে বার বার দাঁড় টেনে নৌকা এগিয়ে নিয়ে যাবার করেন। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। দাঁড়ের নিক্ষেপে প্রতিবার যে শব্দ হয় তা যেন কবির প্রতি স্রোতের বিদ্রুপ। কবি যে সমাজসংসারের নানা বন্ধনে বন্দি। তাঁর বন্দিদশাকে স্রোত বিদ্রুপ করে। কবি চান সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে সুদূরের স্বপ্নলোকে চলে যেতে। যেতে পারেন না বলেই তাঁকে স্রোতের বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়। অসহায়, নিরুপায় কবি ব্যর্থতার বেদনায় বিষণ্ণ হয়ে পড়েন।