ভাঙার গান’ কবিতায় কবির অকৃত্রিম স্বদেশপ্রীতির প্রকাশ কীভাবে ঘটেছে, তা আলোচনা করো। |
কবির দেশপ্রেম
কবি নজরুল একবার বলেছিলেন- “বিংশ শতাব্দীর অসম্ভবের সম্ভাবনার যুগে আমি জন্মগ্রহণ করেছি। এরই অভিযানে সেনাদলের তুর্যবাদকের একজন আমি। এই হোক আমার শেষ পরিচয়।” সৈনিক কবি নজরুল তাঁর কাব্যবীণাকে অগ্নিবীণায় এবং প্রেমের বাঁশিকে বিষের বাঁশিতে রূপান্তরিত করেছিলেন। স্বজাতি ও স্বদেশের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা তাঁর ছিল প্রবল। এমনিতেই দেশপ্রেম তাঁর সহজাত প্রবৃত্তি। দেশমাতাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। স্বাধীনতা তাঁর কাছে ছিল জন্মগত অধিকার। ‘ভাঙার গান’ কবিতাটি তাঁর স্বদেশপ্রেমের সাবলীল ভাষ্য।
স্বদেশপ্রেমিক নজরুল স্বদেশের শৃঙ্খলমোচনে তাই ইংরেজদের কারাগারে বন্দি স্বদেশবাসীকে বিপ্লবের মন্ত্রে উজ্জীবিত করতে বলেছেন–
কবির আহ্বানবাণী
স্বদেশপ্রেমিক নজরুলের এ এক ভিন্ন মূর্তি, বিপ্লবী মনোভাব। আসলে কবি জানেন যে, অত্যাচারী ইংরেজদের শান্তির ললিত বাণী শোনানো পরিহাস ছাড়া আর কিছু নয়। তাই নিজ অধিকার ছিনিয়ে নিতে কবি যেমন ‘তরুণ ঈশান’রূপী বিপ্লবীকে আহ্বান করেছেন, তেমনই আহ্বান করেছেন ‘পাগলা ভোলা’রূপী বিপ্লবীদের। এরাই পারে ধ্বংস নিশান ওড়াতে, এরাই পারে প্রলয় দোলাতে কারাগারের গারদগুলোকে ভেঙে ফেলতে। বিপ্লবীদের কাছে জীবনমৃত্যু পায়ের ভৃত্য ছাড়া আর কিছু নয়। তাই কবি বলেছেন–
তাই চুপচাপ সময় না কাটিয়ে তিনি বিপ্লবীদের ইংরেজদের ভীম কারাগারের ভিত্তি নাড়িয়ে বন্দিশালায় আগুন জ্বালাবার কথা বলেছেন। অর্থাৎ ভারতমাতার পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনের কথা বলেছেন তিনি। সমগ্র কবিতাটি যেন স্বদেশপ্রাণ নজরুলের অকৃত্রিম দেশবন্দনার বাণীরূপের প্রকাশ স্বরূপ।