‘ভাঙার গান’ কবিতায় সমকালীন পরাধীন ভারতবর্ষের পটভূমিকায় কবি নজরুলের যে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে, তা নিজের ভাষায় লেখো

'ভাঙার গান' কবিতায় সমকালীন পরাধীন ভারতবর্ষের পটভূমিকায় কবি নজরুলের যে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে, তা নিজের ভাষায় লেখো
‘ভাঙার গান’ কবিতায় সমকালীন পরাধীন ভারতবর্ষের পটভূমিকায় কবি নজরুলের যে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে, তা নিজের ভাষায় লেখো।

ভূমিকা

কবি ও গীতিকার কাজী নজরুল ইসলাম ‘বিদ্রোহী কবি’ রূপে সমধিক পরিচিত। তাঁর বিদ্রোহ কোনো নির্দিষ্ট দল বা জাতির বিরুদ্ধে নয়। তিনি যেখানে দেখেছেন ধর্মীয় ভণ্ডামি, কুসংস্কার, জাতপাতের ভেদাভেদ, অন্ধত্ব এবং অবিশ্বাস সেখানেই তিনি খঙ্গহস্ত হয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে তিনি অবির্ভূত হয়েছিলেন ধূমকেতুর মতো বিদ্রোহের নিশান উড়িয়ে ‘বিষের বাঁশি’ হাতে নিয়ে ‘ভাঙার গান’ গেয়ে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় তিনি বলেছেন–

‘মহাবিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, 

অত্যাচারীর খঙ্গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না।’

কবির বিদ্রোহী মানসিকতা

‘ভাঙার গান’ কবিতাতেও কবির বিদ্রোহী মানসিকতা পরিলক্ষিত। তিনি সুন্দরের পূজারি বলে সুন্দরের অপমান সহ্য করেন না। ভারতবর্ষের পরাধীনতাকেও তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই যেসকল বিপ্লবী অত্যাচারী ইংরেজদের কারাগারে বন্দি, তাদের উদ্দেশে তিনি যা বলেছেন, তাতে তাঁর বিদ্রোহী মানসিকতা পরিলক্ষিত–

“কারার ওই লৌহ-কপাট 
ভেঙে ফেল, কররে লোপাট 
রক্ত-জমাট 
শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী!”

কবির প্রতিবাদী ভাবনা

তিনি বিপ্লবীদের ‘তরুণ ঈশান’ সম্বোধন করে প্রলয় বিষাণ বাজিয়ে ধ্বংস নিশান উড়িয়ে প্রাচীন প্রাচীরকে বিনষ্ট করবার আহ্বান জানিয়েছেন। বিপ্লবীদের গাজনের বাজনা বাজানোর কথা বলেছেন, ‘পাগলা ভোলা’ সম্বোধন করে গারদগুলোকে হ্যাঁচকা টানে ধ্বংস করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। কবি বলতে চেয়েছেন বিপ্লবীরা যেন ‘হৈদরী হাঁক’ দিয়ে ‘দুন্দুভি ঢাক’ কাঁধে নিয়ে মৃত্যুকে জীবনপানে ডাক দেয়। সময়ের অপচয় না করে বিপ্লবীরা যেন ভীম কারাগারের ভিত্তিভূমিকে নাড়িয়ে দেয়, ‘যত সব বন্দি-শালা’-য় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সমগ্র কবিতায় কবির প্রতিবাদী ভাবনার বা বিদ্রোহী মানসিকতার পরিচয় পরিলক্ষিত।

Leave a Comment