‘আমরা’ কবিতায় কবির ইতিহাসচেতনার কী পরিচয় পাওয়া যায় লেখো

'আমরা' কবিতায় কবির ইতিহাসচেতনার কী পরিচয় পাওয়া যায় লেখো
‘আমরা’ কবিতায় কবির ইতিহাসচেতনার কী পরিচয় পাওয়া যায় লেখো।
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘আমরা’ কবিতায় বাঙালির গৌরব বর্ণনাকালে বাঙালির ইতিহাসকেও প্রকাশ করেছেন। পাঠ্য কবিতাটি কবির স্বাজাত্যবোধের প্রকাশক। এখানে ইতিহাস বর্ণনা মুখ্য বা আখ্যান হয়ে আসেনি, এসেছে বীরগাথার প্রকাশে সহায়ক হয়ে। প্রথমেই তিনি বলেছেন বাঙালির প্রাচীনত্বের ইতিহাস। বলেছেন বাঘ, সাপ ইত্যাদি বন্যজন্তুসংকুল আদিম পৃথিবীতে বাঙালির অস্তিত্ব ছিল। এই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে জয় করেছে বাঙালি। তারপর তিনি বলেছেন অনার্য বাঙালির আর্য আক্রমণের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথা-

‘আমাদের সেনা যুদ্ধ করেছে সজ্জিত চতুরঙ্গে, 
দশানন জয়ী রামচন্দ্রের প্রপিতামহের সঙ্গে।’

ইতিহাসচেতনা

বাঙালির বীরসন্তান বিজয়সিংহ পিতার কাছ থেকে বিতাড়িত হয়ে লঙ্কাপ্রদেশে যান, সেখানে বাহুবলে তিনি নতুন রাজ্য স্থাপন করেন। সেখানকার রাজকন্যাকে বিবাহ করেন। তার নামানুযায়ী লঙ্কাপ্রদেশের নাম হয় সিংহল। অজন্তার গুহাচিত্রে তাঁর চিত্র অঙ্কিত আছে। বাঙালির এই বিজয়কীর্তির পাশাপাশি বাহুবলদীপ্ত, তেজোময় চরিত্রেরও তিনি প্রকাশ ঘটিয়েছেন। মগ দস্যুদের আক্রমণ প্রতিরোধকারী বাঙালির কথা কবি যেমন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, তেমনই বলেছেন চাঁদ রায় ও প্রতাপসিংহের কথা। শ্রীপুরের রাজা কেদার রায়ের ভাই চাঁদ রায় মোগলের সঙ্গে যুদ্ধে মারা গেলেও কেদার মোগলদের বাংলা থেকে দূর করেন এবং ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে আকবরের সেনাপতিকে পরাস্ত করে সন্দীপ অধিকার করেন। অপর এক ভুঁইয়া প্রতাপসিংহ মোগলদের যুদ্ধে পরাস্ত করেন। এভাবেই বাঙালির অতীত ইতিহাস ও বীরত্ব প্রকাশে কবি ঐতিহাসিকতাকে আশ্রয় করেছেন।

Leave a Comment