পক্ষধরের পক্ষশাতন কাহিনিটি নিজের ভাষায় লিখে তা কীভাবে বাঙালিকে যশের মুকুট পরায় বুঝিয়ে দাও। |
পক্ষধরের কাহিনি
‘ছন্দের জাদুকর’ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর স্বদেশভাবাত্মক ‘আমরা’ কবিতায় বাঙালির অতীত গৌরবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ‘পক্ষধরের পক্ষশাতন’ প্রসঙ্গটি এনেছেন। নব্যন্যায়ের প্রবর্তক গঙ্গেশ উপাধ্যায়ের শিষ্য ছিলেন জয়দেব মিশ্র। তিনি একপক্ষের পাঠ একদিনে আয়ত্ত করতেন এবং তর্কযুদ্ধে দুর্বল পক্ষকে অবলম্বন করেও জয়ী হতেন। এ জন্য তিনি পক্ষধর মিশ্র নামে খ্যাত হন। পক্ষধর মিথিলার রাজা ভৈরব সিংহের সভাসদ এবং বিদ্যাপতির সহাধ্যায়ী ছিলেন। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে ‘প্রসন্নরাঘব’ নাটক রচনা তাঁকে প্রভূত যশ ও খ্যাতির অধিকারী করে। নবদ্বীপনিবাসী বাঙালি কিশোর রঘুনাথ শিরোমণি পক্ষধর মিশ্রের ছাত্র ছিলেন। গুরু পক্ষধর তাঁর ছাত্রের পাণ্ডিত্যে ঈর্ষান্বিত হন এবং ছাত্রকে তর্কযুদ্ধে গুরুরই সঙ্গে লিপ্ত হতে বাধ্য করেন। রঘুনাথ গুরুকে ন্যায়তর্কে পরাস্ত করেন। মধ্যযুগের এই উজ্জ্বল কীর্তির কথা অন্যত্র বন্দিত হলেও কবি সত্যেন্দ্রনাথ বাঙালির গৌরবময় এ ঘটনাকে স্বমহিমায় প্রকাশ করেছেন–
‘কিশোর বয়সে পক্ষধরের পক্ষশাতন করি’
বাঙালির ছেলে ফিরে এল দেশে যশের মুকুট পরি।’
বাঙালির বিজয়গাথা গাইতে বসে কবি কিশোর রঘুনাথের কীর্তিতে অভিভূত হয়েই এ কথা বলেছেন।
কবি সত্যেন্দ্রনাথ পক্ষধরের পরাজয়কে পক্ষধরের (পক্ষ বা ডানা বা পাখাধারণকারী অর্থে ব্যবহার করে) পক্ষশাতন বা ছেদন বা বিনাশন বলেছেন। অর্থাৎ পক্ষধরের জ্ঞান-অহংকার চূর্ণ করা ডানাধারীর ডানা কাটারই শামিল। কিন্তু রঘুনাথের যশোলাভ কেবল এতেই শেষ হয়নি। পরাজিত পক্ষধর রঘুনাথকে মিথিলা থেকে বাংলায় কোনো পুথি আনতে দেননি। রঘুনাথ ন্যায়ের সমস্ত পুথি কণ্ঠস্থ করে বাংলার নবদ্বীপে ফিরে নব্যন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন।