‘বাংলার রবি জয়দেব কবি কান্ত কোমল পদে’- জয়দেবের পরিচয় দাও। তাঁকে ‘বাংলার রবি’ বলা হয়েছে কেন? ‘কান্ত কোমল পদ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

'বাংলার রবি জয়দেব কবি কান্ত কোমল পদে'- জয়দেবের পরিচয় দাও। তাঁকে 'বাংলার রবি' বলা হয়েছে কেন? 'কান্ত কোমল পদ' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন
‘বাংলার রবি জয়দেব কবি কান্ত কোমল পদে’- জয়দেবের পরিচয় দাও। তাঁকে ‘বাংলার রবি’ বলা হয়েছে কেন? ‘কান্ত কোমল পদ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

পরিচয়

দ্বাদশ শতকে কেন্দুবিল্বনিবাসী ভোেজদেব ও বামাদেবীর সন্তান হলেন জয়দেব। দ্বাদশ শতকের শেষার্ধে লক্ষ্মণ সেনের রাজসভার পঞ্চরত্নের অন্যতম ছিলেন তিনি। ১১৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘গীতগোবিন্দম্’ কাব্য রচনা করেন। কৃষ্ণকথাকে নিয়ে সর্বপ্রথম এই কাব্য আজও ত্রিভুবন উজ্জ্বলকারী কাব্যরূপে খ্যাত। জয়দেবের কাব্য কেবল পাঠক ও ভক্তদের কাছেই নয়, পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত বাংলা কাব্য ও সাহিত্যের অন্যতম চর্চার বিষয়। কবি বুদ্ধদেব বসু জয়দেবকে ‘আধুনিক ভারতীয় সাহিত্যের পূর্বরাগ’ বলে চিহ্নিত করেছেন। জয়দেবের গ্রন্থ বৈষ্ণবসমাজের অতি প্রিয়, পরম আদৃত। সহজিয়ারা জয়দেবকে আদি গুরু এবং নবরসিকের অন্যতম বলেন। জয়দেব নিজের পদাবলিকে বলেছিলেন ‘মধুর কোমল কান্ত পদাবলি’। কবি জয়দেবের কাব্যের ভাষা বাংলা না হলেও তিনি একান্তরূপে বাঙালি। বাংলাদেশই তাঁর মাতৃভূমি এবং তাঁর পদাবলিতেও বাঙালিয়ানারই প্রকাশ।

বাংলার রবি’ বলার কারণ

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘আমরা’ কবিতায় অগ্রজ কবির যথার্থ মূল্যায়ন করেছেন। জয়দেবের কাব্যভাষা সংস্কৃত হলেও তিনি খাঁটি বাঙালি এবং বাংলাদেশের তথা ভারতবর্ষের চিরন্তন কবিপ্রতিভা। ‘রবি’ যেমন তারাদলে প্রধান, কবি জয়দেবও তেমন সমকালীন কবিকুলে শ্রেষ্ঠত্বের আসন-অধিকারী। রবিতেজে যেমন বিশ্ব আলোকিত, জয়দেবের কাব্যে পাঠক ও ভক্তও বিমোহিত; রবি যেমন অবিনশ্বর, জয়দেবও তেমনই শাশ্বত। এ কথাগুলি বোঝাতেই কবি তাঁকে ‘বাংলার রবি’ আখ্যা দিয়েছেন। ‘কান্ত কোমল পদ’ বলতে কবি জয়দেব রচিত ‘গীতগোবিন্দম্’ কাব্যটিকে বুঝিয়েছেন কবি সত্যেন্দ্রনাথ, যাকে স্বয়ং জয়দেবই’মধুর কোমল কান্ত পদাবলি’ বলে আখ্যাত করেছেন। ভারতবর্ষের ‘কান্ত কোমল পদ তাৎপর্য কাব্যধারায় এই একটি কাব্যগুণেই জয়দেব চিরস্মরণীয়। এ কাব্য বৈম্নবদের নিত্য আরাধ্য, সংগীতরূপে গেয়, পরম আকর গ্রন্থের মতো পূজিত। বাঙালি স্বভাবকোমলতায় এ কাব্যরসে মুগ্ধ।

Leave a Comment