নীল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। |
নীল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য:
ইংরেজ আমলে যেসব কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল, তার মধ্যে নীল বিদ্রোহ ছিল নানাদিক থেকে উল্লেখযোগ্য। এই বিদ্রোহে এমন কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ছিল যা অন্যান্য বিদ্রোহগুলিতে দেখা যায় না। যেমন-
[1] নীলকরবিরোধী বিদ্রোহ:
নীল বিদ্রোহ ছিল নীলকরবিরোধী বিদ্রোহ- এটি অন্যান্য বিদ্রোহের মতো জমিদার বা মহাজনবিরোধী বিদ্রোহ ছিল না। নীলকর সাহেবদের অকথ্য অত্যাচার ও জোরজবরদস্তির বিরুদ্ধে নীলচাষিরা সংঘবদ্ধ হয়েছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল নীলচাষ প্রথার পুরোপুরি অবসান ঘটানো।
[2] কৃষকদের কঠোর মনোভাব:
নীল বিদ্রোহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল কৃষকদের কঠোর মনোভাব। এই বিদ্রোহে কৃষকরা দৃঢ়তার সঙ্গে মনস্থির করেছিল যে, মরব তবু নীলচাষ করব না। শেষপর্যন্ত বিদ্রোহী কৃষকরা বাংলা থেকে নীলচাষ বন্ধ করেছিল।
[3] আন্দোলনে প্রথম ধর্মঘটের প্রয়োগ:
এল নটরাজন বলেছেন, নীলচাষ করতে অস্বীকার করে বাংলার কৃষকরা ভারতের ইতিহাসে প্রথম ধর্মঘটের নজির সৃষ্টি করে।(১) ভারতে কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাসে এই ঘটনা ছিল অভিনব।
[4] ধর্মনিরপেক্ষ বিদ্রোহ:
ওয়াহাবি, ফরাজি, সাঁওতাল, মুণ্ডা প্রভৃতি বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি ছিল ধর্ম। কিন্তু নীল বিদ্রোহে তা ছিল না। নীল বিদ্রোহ ছিল মূলত কৃষকদের অধিকার রক্ষার বিদ্রোহ। নীল বিদ্রোহে হিন্দু-মুসলমান সব সম্প্রদায়ের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে শামিল হয়েছিল।
[5] বিদ্রোহে খ্রিস্টান মিশনারিদের সমর্থন:
নীল বিদ্রোহে খ্রিস্টান মিশনারিরা বিদ্রোহীদের সমর্থন করেছিল। তারা নীলচাষিদের উপর নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছিল। জেমস লঙ ‘নীলদর্পণ’ নাটকটি ইংরেজিতে অনুবাদ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এজন্য তাঁকে জেলেও যেতে হয়েছিল।
উপসংহার:
পরিশেষে বলা যায়, নীল বিদ্রোহ বাঙালি সমাজে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বাঙালি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় নীলচাষিদের বিদ্রোহকে সমর্থন করেছিল। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় নীলচাষিদের সমর্থনে নিয়মিত লেখা প্রকাশ করতেন। তা ছাড়া অন্যান্য পত্রপত্রিকা ও নাটকে যেভাবে নীল বিদ্রোহকে সমর্থন করা হয়েছিল তা ছিল অভূতপূর্ব।