পাগলপন্থী বিদ্রোহ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

পাগলপন্থী বিদ্রোহ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
পাগলপন্থী বিদ্রোহ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

ভূমিকা

ময়মনসিংহ জেলার শেরপুর পরগনায় ফকির করিম শাহের পুত্র টিপু শাহের নেতৃত্বে ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে যে জমিদার ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন পরিচালিত হয়, তা পাগলপন্থী আন্দোলন নামে পরিচিত। করিম শাহ ছিলেন ‘পাগলপন্থী’ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি সহজসরলভাবে ধর্মের ব্যাখ্যা করতেন। তিনি বলতেন, সব মানুষ এক আল্লাহর সৃষ্টি; সুতরাং সবাই সমান ও পরস্পরের ভাই। তাঁর প্রচারের ফলে বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষের মধ্যে ঐক্যবোধ সৃষ্টি হয়েছিল।

পাগলপন্থী বিদ্রোহের কারণ

বিভিন্ন কারণে পাগলপন্থী সম্প্রদায় বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল-

[1] ব্রিটিশ শাসনরীতি: বাংলায় ব্রিটিশ শাসন চালু হলে গ্রামীণ সমাজব্যবস্থার চিরাচরিত প্রথা ও রীতিনীতি অচল হয়ে যায়।

[2] করের হার বৃদ্ধি: ব্রিটিশ ভূমিরাজস্ব নীতি চালু হওয়ার ফলে করের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়।

[3] জমিদারি শোষণ: নির্দিষ্ট ভূমিরাজস্ব ছাড়াও জমিদারগণ নানারকম বাড়তি কর বা আবওয়াব আদায় করত। জমিদারের চাহিদা মেটাতে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়ে যেত।

[4] ইঙ্গ-ব্রহ্ম যুদ্ধের চাপ: ইঙ্গ-ব্রহ্ম যুদ্ধের সময় কোম্পানির ব্যয় বৃদ্ধি ঘটলে এখানকার কৃষকদের কাছ থেকে বাড়তি কর আদায় করা হয়।

পাগলপন্থী বিদ্রোহ

১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে করিম শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র টিপু শাহ পাগলপন্থীদের নেতা হন। তাঁর নেতৃত্বে পাগলপন্থী আন্দোলন সরাসরি জমিদারবিরোধী ও ব্রিটিশ সরকারবিরোধী কৃষক বিদ্রোহের রূপ নেয়।

[1] কৃষকেরা জমিদারদের কর দেওয়া বন্ধ করে।

[2] টিপু শাহের নামে স্বল্প পরিমাণে কর আদায় শুরু করে।

[3] বিদ্রোহীরা ব্রিটিশ সরকারের সব নিয়ম-নির্দেশ অগ্রাহ্য করতে থাকে। থানায় অগ্নিসংযোগ করে, শহরে লুঠপাট শুরু করে এবং ময়মনসিংহের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেটকেও ঘেরাও করে রাখে। ফলে সরকারের সঙ্গে পাগলপন্থীদের লড়াই শুরু হয়। শেষপর্যন্ত টিপুর বাহিনী পরাজিত হয় ও টিপু ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর বন্দি হন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে আবার তিনি বন্দি হন। বিচারে তিনি ২৫ বছরের শাস্তি পান এবং ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে জেলখানাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।

পাগলপন্থী বিদ্রোহের গুরুত্ব

পাগলপন্থী বিদ্রোহ প্রকৃতিগতভাবে ছিল এক কৃষক বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।

[1] কিছুদিনের জন্য শেরপুর অঞ্চলে পাগলপন্থীদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

[2] এই বিদ্রোহে অত্যাচারিত কৃষকদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছিল।

[3। এই বিদ্রোহ জমিদার ও ব্রিটিশবিরোধী পরবর্তী বিদ্রোহগুলিকে প্রভাবিত করেছিল।

Leave a Comment