১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের ফলাফল সম্পর্কে লেখো। |
ভূমিকা
পরিবর্তনসমূহ
কোম্পানি শাসনের অবসান
প্রশাসনিক সংস্কার
[1] ভাইসরয় পদের সৃষ্টি: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের পর ইংল্যান্ডে কোম্পানির ভারত প্রশাসন সংক্রান্ত বিষয়ে সংস্কার করা হয়। ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে পিটের ভারত আইন অনুসারে ‘বোর্ড অফ কন্ট্রোল’, ‘কোর্ট অফ ডাইরেক্টরস’, ‘সিক্রেট কমিটি’ লন্ডন থেকে ভারতীয় প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করত। তখন এই সংস্থাগুলি বাতিল করে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট ইন্ডিয়া কাউন্সিল গঠিত হয়। এর সভাপতি হন ভারত-সচিব (Secretary of the State for India)। তিনি ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার ভারত বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত একজন মন্ত্রী ছিলেন। তিনি তাঁর কাজের জন্য পার্লামেন্টের কাছে দায়ী থাকতেন। এ ছাড়া গভর্নর জেনারেল পদের নাম পরিবর্তন করে ভাইসরয় করা হয়। ভারতের প্রথম ভাইসরয় হন লর্ড ক্যানিং।
[3] দেশীয় রাজ্যের নীতিতে পরিবর্তন: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের আগে পর্যন্ত দেশীয় রাজ্যগুলিকে রক্ষা করার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেগুলিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হয়েছিল। এখন থেকে ব্রিটিশদের সঙ্গে এদের সম্পর্ক অনেকটা বন্ধুত্বপূর্ণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
সামরিক সংস্কার
[1] ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের উৎসকেন্দ্র ছিল সেনাবাহিনী, তাই সেনাবাহিনীতে গুরুতর পরিবর্তন ঘটানো হয়। ভবিষ্যতে সেনা বিদ্রোহের আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে ভারতীয় জাতিগোষ্ঠীগুলিকে বিভেদনীতির সাহায্যে বিভক্ত করা হয়- যেসব জাতিগোষ্ঠীর সৈন্য ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে যোগ দিয়েছিল তাদের ‘অসামরিক (Non-Martial Race) জাতি’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের মধ্য থেকে সৈন্যনিয়োগ নিষিদ্ধ হয়। যেমন- বাঙালি, বিহারি, অযোধ্যাবাসী ইত্যাদি। বিদ্রোহের উৎসকেন্দ্র ‘বেঙ্গল আর্মি’ ভেঙে দেওয়া হয়। চ আর যেসব জাতিগোষ্ঠীর সৈন্যরা বিদ্রোহ দমনে ইংরেজ সরকারকে সাহায্য করেছিল তারা ‘সামরিক জাতি’ (Martial Race) হিসেবে চিহ্নিত হন। ভবিষ্যতে এদের মধ্য থেকে বেশি সংখ্যায় সৈন্যনিয়োগের নীতি গৃহীত হয়। যেমন- পাঠান, শিখ, গোর্খা, রাজপুত প্রভৃতি।
[2] এ ছাড়া উচ্চপদে ভারতীয়দের নিয়োগ না করা, জাতি-ধর্ম-গোষ্ঠীগত অনুপাত বজায় রেখে ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়। এই বিভেদকে প্রশ্রয় দিয়ে ভবিষ্যৎ বিদ্রোহের সম্ভাবনা দূর করা ও তা দমনের সুব্যবস্থা করা হয়। ভারতীয় বাহিনীতে ইংরেজ সৈন্যসংখ্যা বাড়ানো হয়। গোলন্দাজ বাহিনীতে ভারতীয়দের নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়।
মহারানির ঘোষণা
[1] যোগ্যতা ও গুণ অনুসারে সমস্ত ভারতীয় সরকারি কাজের সুযোগ পাবে। এক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম, বর্ণগত ভেদ বাধা হবে না।
[2] দেশীয় রাজারা দত্তকপুত্র গ্রহণ করতে পারবে।
[3] নতুন কোনো রাজ্য জয় করা হবে না।
[4] দেশীয় রাজাদের সঙ্গে পূর্ব সম্পাদিত চুক্তি বলবৎ থাকবে।
[5] ধর্মপালন ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রজাদের স্বাধীনতা বজায় থাকবে।