‘বেতালের মুখে প্রশ্ন যে ছিল আমরা নিয়েছি কেড়ে,’– বেতালের আখ্যানটি সংক্ষেপে লেখো। বেতালের প্রশ্ন কেড়ে নেওয়ার তাৎপর্য কী?

'বেতালের মুখে প্রশ্ন যে ছিল আমরা নিয়েছি কেড়ে,'-- বেতালের আখ্যানটি সংক্ষেপে লেখো। বেতালের প্রশ্ন কেড়ে নেওয়ার তাৎপর্য কী
‘বেতালের মুখে প্রশ্ন যে ছিল আমরা নিয়েছি কেড়ে,’– বেতালের আখ্যানটি সংক্ষেপে লেখো। বেতালের প্রশ্ন কেড়ে নেওয়ার তাৎপর্য কী?

বেতালকাহিনি

‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’ গ্রন্থের দ্বাত্রিংশৎ পুত্তলিকায় প্রাপ্ত কাহিনিতে রাজা বিক্রমাদিত্য ও বেতালের কাহিনি জানা যায়। উজ্জয়িনীর রাজা বিক্রমাদিত্যকে বধ করে সন্ন্যাসী শান্তশীল তার সিংহাসন অধিকার করতে চেয়েছিলেন। শবসাধক শান্তশীলের আমন্ত্রণে তার সাধনায় সাহায্য করার জন্য বিক্রমাদিত্য কৃষ্ণা চতুর্দশীর রাতে শ্মশানে যান। শ্মশানের শিরীষ গাছে ঝুলন্ত শব (যাকে শান্তশীল ‘বেতাল’ নামের ভূত করে রেখেছিল) আনতে গেলে শব রাজাকে বলে যে, সে তাকে কতকগুলি গল্প বলবে ও গল্পের শেষে একটা করে প্রশ্ন করবে। প্রশ্নের ঠিক উত্তর দিলে সে তখনই গাছে ফিরে যাবে। উত্তর জেনেও না বললে উত্তরদাতা বুক ফেটে মরে যাবে। রাজা রাজি হয়ে গল্প শোনেন, প্রশ্নের উত্তর দেন আর বেতাল গাছে ফিরে যায়। এভাবে পঁচিশবার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে সন্তুষ্ট বেতাল রাজাকে শান্তশীলকে বধ করে মুক্তির উপায় বলে দেয় ও রাজার সঙ্গে যায়। রাজা শান্তশীলের কাছে গেলে শান্তশীল বেতালের শবকে উত্তপ্ত তেলের কড়াইতে ডুবিয়ে দিয়ে দেবীর চরণে প্রণাম করতে বলেন। বেতালের কাছে রাজা জেনেছিল প্রণাম করতে নত হলেই শান্তশীল রাজার মাথা খাঁড়া দিয়ে কেটে ফেলবে এবং মন্ত্রপূত তেলের কড়াইতে ফেলে তাকেও ‘তাল’ নামে ভূতে পরিণত করবে। শান্তশীলকে রাজা বলেন তিনি রাজার ছেলে, প্রণামের কৌশল জানেন না। শান্তশীল প্রণামের কৌশল দেখাতে গেলে রাজা খাঁড়া দিয়ে তার মুণ্ডচ্ছেদ করেন এবং তেলের কড়াইতে ফেলে দেন। অমনি কড়াই থেকে তাল ও বেতাল নামে দুই ভূত উঠে এসে রাজার বশ্যতা, দাসত্ব স্বীকার করে।

তাৎপর্য

বেতালের প্রশ্নে উভয়সংকট ছিল। পরাধীন ভারতীয়রাও সেই উভয়সংকটে ছিল- স্বাধীনতা না চিরকাল পরাধীনতা? স্বাধীনতা চাইলে কঠোর শ্রম, আত্মত্যাগ, পরাধীনতার শৃঙ্খল আরও কঠোর হবার সম্ভাবনা। পরাধীনতা চাই বললে মিথ্যাচার। এই উভয়সংকট মোচনে ভারতীয়রা সত্যাগ্রহী হয়। এ কথা বোঝাতেই বেতালের প্রশ্ন কেড়ে নিয়েছি আমরা-এ কথা বলেছেন কবি।

Leave a Comment