ছাপাখানার সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক লেখো

ছাপাখানার সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক লেখো
ছাপাখানার সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক লেখো

ভূমিকা

ছাপাখানার সঙ্গে শিক্ষাবিস্তারের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ছাপা বই পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের সূচনা করে। ছাপাখানা ইউরোপে যেমন নবজাগরণের সূচনা করে, তেমনি বাংলাদেশেও তা নবযুগের জন্ম দেয়।

মুদ্রণের সঙ্গে শিক্ষাপ্রসারের সম্পর্ক

[1] ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের কোম্পানির সনদ: ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলায় মুদ্রণযন্ত্রের বিকাশ শিক্ষাবিস্তারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির সনদ আইনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অবসান ঘটে এবং কোম্পানি শিক্ষাক্ষেত্রে বাৎসরিক ১ লক্ষ টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নিলে ভারতে শিক্ষাবিস্তারে গতি আসে।

[2] বেসরকারি উদ্যোগ: সরকারি বিদ্যালয় ও মিশনারিগণ স্থাপিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি ছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ডেভিড হেয়ার, রামমোহন রায়, রাধাকান্ত দেব, বিদ্যাসাগর প্রমুখ ব্যক্তিত্ব বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

[3] স্কুল বুক সোসাইটির ভূমিকা : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে আগে হাতে লেখা পুথিপত্র ব্যবহার করা হত। শিক্ষক পুথি (হাতে লেখা খাতা বিশেষ) ধরে পড়াতেন। শিক্ষার্থীরা তা শুনত বা কেউ কেউ লিখে রাখত। সব কিছু মনে রাখা বা লিখে নেওয়া সম্ভব ছিল না। শিক্ষাক্ষেত্রে এই অভাব ও অসুবিধা দূর করে ছাপা বই। ছাপা বইতে বিষয়টি সম্পূর্ণ লেখা থাকত। প্রত্যেক শিক্ষার্থী তা পড়তে পারত। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে পাঠ্যপুস্তকের অভাব একটি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছিল।

১৮১৭ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে ডেভিড হেয়ার ‘ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি’ স্থাপন করে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। এই সোসাইটির মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় ছাত্রদের জন্য পর্যাপ্ত ইংরেজি ও বিভিন্ন ভাষায় প্রয়োজনীয় পাঠ্যপুস্তক রচনা, মুদ্রণ ও স্বল্প বা বিনামূল্যে বিতরণ করা।

[4] অনুবাদ সাহিত্যের অবদান : মুদ্রণযন্ত্র পাশ্চাত্যের ইতিহাস, দর্শন, রাষ্ট্রনীতি, গণিত, বিজ্ঞান ইত্যাদির সঙ্গে ভারতবাসীকে পরিচিত হতে সাহায্য করে এবং তা সম্ভব হয় অনুবাদ সাহিত্যের উন্নতির জন্য। ফলে পাশ্চাত্য উদারতন্ত্র, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি ধ্যানধারণার সঙ্গে ভারতবাসীর পরিচয়ের ফলে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে।

[5] শিক্ষিত মনীষীদের ভূমিকা: রামমোহন রায়, রাজা রাধাকান্ত দেব, বিদ্যাসাগর, ইয়ং বেঙ্গলের সদস্যবৃন্দ তাঁদের চিন্তাভাবনা ও ধ্যানধারণার প্রকাশ করেন সংবাদপত্র ও পত্রপত্রিকার মাধ্যমে। ফলশ্রুতিতে আপামর জনসাধারণ সামাজিক কুপ্রথা, কুসংস্কার ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে।

[6] গদ্যসাহিত্যের বিকাশসাধন : মুদ্রণ ব্যবস্থার প্রবর্তনকে কেন্দ্র করে বাংলা গদ্যসাহিত্যের বিকাশের পথ ত্বরান্বিত হয়। পূর্বে বাংলার সাহিত্যে পদ্যরীতি প্রচলিত ছিল। সংবাদপত্র ও পত্রপত্রিকা প্রকাশের দ্বারা গদ্যসাহিত্যের বিকাশ ঘটে।

[7] জনগণের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি:
সংবাদপত্র ও পত্রপত্রিকার দ্বারা জনগণ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংবাদের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করে। ভারতীয় তথা বাঙালি জনগণের জ্ঞানের পরিধি ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

[৪] পাশ্চাত্য শিক্ষার সঙ্গে ভারতবাসীর পরিচিতি লাভ: মুদ্রণশিল্পের উন্নতির ফলে পাশ্চাত্য শিক্ষার সঙ্গে ভারতবাসী পরিচিত হয়। এই পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ করে এক নতুন শিক্ষিত মধ্যবিত্তশ্রেণির উদ্ভব ঘটে, যারা ভারতের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান করতে সহায়তা করেছিল।

[9] সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন:
মুদ্রণ ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার ক্ষেত্রে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন সংবাদপত্র ও পত্রপত্রিকায় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, শিক্ষণ পদ্ধতি ইত্যাদি নিয়ে নানা রকমের রচনা প্রকাশিত হতে থাকে, যা থেকে শিক্ষা সম্বন্ধে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন লক্ষিত হয়।

FAQs ছাপাখানার সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক লেখো

কে ছাপাখানার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন?

ইয়োহানেস গুটেনবার্গ ছাপাখানার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

বাংলার প্রথম ছাপাখানা স্থাপিত হয় কোথায়?

হুগলিতে বাংলার প্রথম ছাপাখানা স্থাপিত হয়।

Leave a Comment