ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স (Indian Association for the Cultivation of Science)-এর অবদান লেখো।

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স (Indian Association for the Cultivation of Science)-এর অবদান লেখো
ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স (Indian Association for the Cultivation of Science)-এর অবদান লেখো।

ভূমিকা

ভারতবর্ষের বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই গড়ে ওঠে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স (IACS) বা ভারতীয় বিজ্ঞানসভা। সমগ্র ভারতে এটিই ছিল প্রথম বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও আলোচনামূলক প্রতিষ্ঠান।

মহেন্দ্রলাল সরকারের ভূমিকা

১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে মহেন্দ্রলাল সরকার মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় এমডি হিসেবে পরিগণিত হন। অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক হিসেবে তাঁর খ্যাতি যথেষ্ট হলেও ক্রমশ তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি হোমিওপ্যাথির সপক্ষে বহু জায়গায় বক্তব্য রাখলে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকরা তাঁকে সমাজচ্যুত করার ব্যাপারে সচেষ্ট হন। এরপর থেকে তিনি একটি জাতীয় বিজ্ঞান সমিতি গড়ে তোলার কথা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেন, যেটি ভারতীয়দের দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হবে। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর সম্পাদিত ক্যালকাটা জার্নাল অফ মেডিসিন (Calcutta Journal of Medicine) নামক মাসিক পত্রিকায় এরুপ একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ‘প্রসপেকটাস’ বা ‘অনুষ্ঠানপত্র’ প্রকাশনা করেন, যেটি ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের ৩ জানুয়ারি হিন্দু প্যাট্রিয়ট-এ প্রকাশিত হয়।

জনপ্রিয়তা ও বিস্তৃতি

IACS-এর উদ্দেশ্য ছিল বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তোলা এবং বিজ্ঞানের গবেষণার মানোন্নয়নের মাধ্যমে পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে চলা। ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার আশা করেছিলেন যে, এই প্রতিষ্ঠান ইংল্যান্ডের রয়্যাল ইনস্টিটিউটের সমমর্যাদাসম্পন্ন হয়ে উঠবে। তাই বৈজ্ঞানিক গবেষণার সঙ্গে সঙ্গে বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের দিয়ে বিজ্ঞান বিষয়ক জনপ্রিয় বক্তৃতার আয়োজন করেন তিনি। ছাত্রমহলে এই জাতীয় বক্তৃতা যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছিল। মহেন্দ্রলালের মৃত্যুর পর এই প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপ আরও প্রসার লাভ করে। বিংশ শতকের ত্রিশের দশকে সি ভি রমন, মেঘনাদ সাহা ও কে এস কৃন্নান-এর সৌজন্যে এর খ্যাতি রয়‍্যাল ইনস্টিটিউটের থেকে কোনো অংশে কম ছিল না। এই বিজ্ঞানীদের মধ্যে স্যার সি ভি রমন বিজ্ঞানে প্রথম ভারতীয় হিসেবে পদার্থবিদ্যায় ‘নোবেল’ পুরস্কার (১৯৩০ খ্রি.) পান।

IACS ও পরবর্তী প্রজন্ম

বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিগত শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপরেও জোর দেওয়া হয়েছিল। বাংলায় রাজেন্দ্রলাল মিত্র-কে ‘জাতীয় প্রযুক্তিবিদ্যার পথিকৃৎ’-এর মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে। তিনি চেয়েছিলেন, এই সময়কার ছাত্রদের মধ্যে প্রযুক্তিগত শিক্ষার অগ্রগতি ও বিকাশ ঘটাতে। ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার যখন তাঁর বিজ্ঞানসভা গড়ে তোলার ব্যাপারে বিশেষ সক্রিয় হয়েছিলেন, সেই সময় ইন্ডিয়ান লিগের সদস্যরা চেয়েছিলেন একটি কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে। এই নিয়ে সিনেট হলে ঐতিহাসিক বিতর্ক শুরু হয়। রাজেন্দ্রলাল মিত্র এবং ফাদার লাফোঁ বিজ্ঞানসভা প্রতিষ্ঠার পক্ষেই রায় দেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, বিজ্ঞানচর্চা ব্যতীত প্রযুক্তিবিদ্যার সেই অর্থে অগ্রগতি সম্ভবপর হয় না। প্রসঙ্গক্রমে বলা যেতে পারে যে, হিন্দুমেলাও প্রযুক্তিবিদ্যায় উন্নতির ব্যাপারে বিশেষ সক্রিয় হয়েছিল। এরপর সতীশচন্দ্র মুখার্জি ‘ডন সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘ডন পত্রিকা’ (১৯০২ খ্রি.) প্রকাশ করেন। তিনি এই পত্রিকায় প্রযুক্তিগত দিক থেকে অগ্রগতির উপরে জোর দেন।

মূল্যায়ন

এইভাবে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স গঠনের মাধ্যমে ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার ঔপনিবেশিক ভারতে বিজ্ঞানচর্চার যে পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছিলেন, তা পরবর্তীকালে উন্নত থেকে উন্নততর পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিজ্ঞানসাধনায় তাঁর এই বিপুল অবদানের জন্য ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার-কে ‘জাতীয় বিজ্ঞানচর্চার জনক’ বলে অভিহিত করা হয়।

FAQs on ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স (Indian Association for the Cultivation of Science)-এর অবদান

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স কে প্রতিষ্ঠা করেন?

টাটা ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

Iacs এর যে বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পান

চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন।

কে কবে iacs প্রতিষ্ঠা করেন?

১৮৭৬ সালে  iacs প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার।

Iacs প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কি ছিল?

বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশ ঘটানো।

Iacs কে প্রতিষ্ঠা করেন?

Iacs কে প্রতিষ্ঠা করেন ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এর প্রতিষ্ঠাতা কে?

মেঘনাদ সাহা।

Leave a Comment