ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি সম্বন্ধে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি সম্বন্ধে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো
ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি সম্বন্ধে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

ভূমিকা

মানবসভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাসের সমান্তরালে শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাসও বিদ্যমান। শোষিত, নিপীড়িত মানুষেরা যুগে যুগে বিক্ষোভ-বিদ্রোহের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে। শিল্পবিপ্লবের পর মার্কসীয় ব্যাখ্যা তাদের শোষণমুক্তির দিশা দেখায় ও শ্রেণিসংগ্রামের প্রেরণা জোগায়। ভারতেও বামপন্থীরা শ্রমজীবী মানুষের শোষণমুক্তির জন্য ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি গঠন করে। এই দল তার লক্ষ্যে পৌঁছোনোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির প্রতিষ্ঠা

১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ অক্টোবর রাশিয়ার তাসখন্দে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কানপুরে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলা হয়। ইংরেজ সরকারের দমননীতি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য ভারতের কমিউনিস্ট নেতারা গোপনে তাদের কার্যকলাপ পরিচালনা করতে থাকেন। এই সময় তারা শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে বামপন্থী মতাদর্শ প্রচার ও তাদের সংগঠিত করার জন্য ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি (WPP) গঠনের চেষ্টা করেন।

বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে জানা যায়, ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষ্ণনগরে ডা. নরেশ সেনগুপ্তের সভাপতিত্বে নিখিল বঙ্গ পেজেন্টস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের কমিউনিস্ট গোষ্ঠীগুলি একটি সমাবেশ করে। এস এ ডাঙ্গে, মুজফ্ফর আহমেদ, পি সি যোশি এবং মোহন সিং যোশ-এর নেতৃত্বে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি (WPP) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৭ ও ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এই পার্টি অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠেছিল।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির শাখা সংগঠন

এরপর বিভিন্ন রাজ্যে এর শাখা সংগঠন গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। বাংলায় লেবার স্বরাজ পার্টি পেজেন্টস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি ইন বেঙ্গল নামে পরিচিত হয়। বাংলা শাখার সম্পাদক ছিলেন মুজফ্ফর আহমেদ। এ ছাড়া কাজী নজরুল ইসলাম, হেমন্ত কুমার সরকার, গোপেন চক্রবর্তী, ধরণী গোস্বামী এর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এদের প্রকাশিত প্রথম বাংলা মুখপত্র ছিল ‘লাঙ্গল’, পরে ‘গণবাণী’ প্রকাশিত হয়।

বোম্বাই-এর শাখা সংগঠনের সম্পাদক ছিলেন এস এস মিরাজকর। এই দলের মুখপত্র ছিল ‘ক্রান্তি’। যুক্তপ্রদেশের শাখা সংগঠনের সম্পাদক ছিলেন পূর্ণচন্দ্র যোশি। এখানে দলীয় মুখপত্র ছিল ‘অসন্তিকারী’। পাঞ্জাব শাখার সম্পাদক ছিলেন মোহন সিং যোশ। এখানে দলীয় মুখপত্র ছিল ‘কীর্তি কিষান’ এবং ‘ইনকিলাব’। মাদ্রাজে দলের সম্পাদক ছিলেন সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ার। এদের দলীয় মুখপত্র ছিল ‘ওয়ার্কার’।

১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে কলকাতায় সারা ভারত ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি-র এক সম্মেলন হয়। এই সম্মেলনে আর এস নিম্বকারকে সর্বভারতীয় সম্পাদক মনোনীত করা হয়। বোম্বাই-এ বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন গিরনি-কামগড় ইউনিয়ন (GKU) গড়ে তোলার ব্যবস্থা হয়।

কর্মসূচি

শ্রেণিসংগ্রাম, বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথা লোপ, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, সংবাদপত্র ও বাস্বাধীনতা, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকারদান প্রভৃতি দাবি তোলা হয়।

কার্যকলাপ

এইসব শাখা সংগঠন এবং আঞ্চলিক পত্রপত্রিকার মাধ্যমে শ্রমজীবীদের মধ্যে প্রচারের কাজ চলে। বামপন্থী চিন্তাধারা তাদের প্রভাবিত করে। শ্রমজীবীরা বুঝতে পারে তারা আলাদা একটা সামাজিক শ্রেণি। তাদের মধ্যে এক ঐক্যভাব গড়ে ওঠে। শোষকশ্রেণিকে তারা চিনতে পারে। নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য তারা যৌথভাবে আলোচনা শুরু করে। শিল্পাঞ্চলে ক্রমশ তারা সংগঠিত হয়ে ওঠে। সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠন AITUC-তে বামপন্থী প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন ধর্মঘটে শ্রমিকরা সক্রিয়ভাবে যোগদান করে।

মূল্যায়ন

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি-র প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে ভারতের শ্রমজীবীদের মুক্তি আন্দোলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই সংগঠন গঠনমূলক ভূমিকা পালন করলেও এই সংগঠন ছিল শহরকেন্দ্রিক, তাই শহরের শিল্পশ্রমিকেরা এর আওতায় এসেছিল। গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে তারা নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলতে না পারায় কৃষকেরা সংগঠিত হতে পারেনি। এই সংগঠনের হাত ধরে কমিউনিস্ট পার্টি তার সংগঠন বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হয়।

Leave a Comment