বিংশ শতকের ভারতে নারী আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো। |
ভূমিকা
বিংশ শতকের সূচনায় নারী আন্দোলন (স্বদেশি আন্দোলনে নারী)
আন্দোলনের পরবর্তী পর্বে যখন বিদেশি দ্রব্য বর্জন করে স্বদেশি দ্রব্য গ্রহণের আন্দোলন শুরু হয় তখন বাংলার নারীরা তাতেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেন। সরলাদেবী চৌধুরাণী প্রতিষ্ঠিত ‘স্বদেশি ভাণ্ডার’ স্বদেশি দ্রব্য বিপণনের একটি প্রধান কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়। তাঁর ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ নামে স্বদেশি দ্রব্য উৎপাদন সংস্থা এবং ‘বীরাষ্টমী ব্রত’ উদ্যাপন স্বদেশি চেতনা জাগ্রত করতে সাহায্য করেছিল। স্বদেশি আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কুমুদিনী মিত্র, লীলাবতী মিত্র, নির্মলা সরকার, হেমাঙ্গিনী দাস, ভগিনী নিবেদিতা প্রমুখ।
তবে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের সময় নারী আন্দোলন মূলত উচ্চবর্ণ, ধনী, বুর্জোয়া, শহুরে নারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
১৯২০-র দশকে নারী আন্দোলন (অসহযোগ আন্দোলনে নারী)
১৯২০ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা হয়। গান্ধিজির নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক বেশি বেড়ে যায়।
গান্ধিজি তাঁর আন্দোলনে নারীদের জন্য সীমিত কর্মসূচি গ্রহণ করেন। নারীদের স্বদেশি দ্রব্য গ্রহণ ও বিদেশি দ্রব্য বয়কট করার কথা বলা হয়। নারীরা এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
এই আন্দোলনে নারীরা পিকেটিং-এ অংশগ্রহণ করেন।
১৯২১ খ্রিস্টাব্দে প্রিন্স অফ ওয়েলস ভারত ভ্রমণে এলে হাজার হাজার নারী বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
নারীরা ‘তিলক স্বরাজ তহবিল’-এ টাকা ও গয়না দান করেন। তারা চরকায় সুতো কেটে ও কাপড় বুনে স্বদেশি কর্মসূচি পালন এবং ‘খাদি আন্দোলন’-কে জোরদার করে তোলেন।
১৯২২ খ্রিস্টাব্দে স্টিমার ধর্মঘটে নেলী সেনগুপ্ত নেতৃত্ব দেন।
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে লতিকা ঘোষের নেতৃত্বে ও সুভাষচন্দ্র বসুর মা প্রভাবতী বসুর সভাপতিত্বে মহিলা রাষ্ট্রীয় সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে কলকাতায় স্বেচ্ছাসেবিকা বাহিনী গঠিত হয়।
১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় নারী সত্যাগ্রহ সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৩০-এর দশকে নারী আন্দোলন (আইন অমান্য আন্দোলনে নারী)
এই পর্বের আন্দোলনে পশ্চিম গোদাবরী ও মহারাষ্ট্রের দেবদাসীরা এবং বাংলার পতিতা মহিলারা নিজেদের গায়ের গয়না ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ত্যাগ করেছিলেন।
‘ভারতের বুলবুল’ নামে পরিচিত সরোজিনী নাইডু ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে ধরসনা লবণগোলা দখল অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
১৯৩০-৩২ খ্রিস্টাব্দে ভারতের নানা প্রান্তে যেসব নারী সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বাসন্তী দেবী, কমলা নেহরু, আশালতা সেন, ইন্দুমতী গোয়েঙ্কা, ফুলবাহার বিবি প্রমুখ।
বিপ্লবী আন্দোলনে নারী: বাংলায় যে বিপ্লবী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল তাতেও শিক্ষিত নারীরা অংশগ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, বীণা দাস, শান্তি ঘোষ, সুনীতি চৌধুরী, সুহাসিনী গাঙ্গুলির নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
১৯৪০-এর দশকে নারী আন্দোলন (ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারী)
বাংলার মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারে মহিলারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এখানে নারী স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে ভগিনী সেনা গঠিত হয়।
‘গান্ধিবুড়ি’ নামে পরিচিত মাতঙ্গিনী হাজরা তমলুক থানা আক্রমণ করার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তা ছাড়া আসামের ১০ বছরের কিশোরী কনকলতা বড়ুয়া, পাঞ্জাবের যোগেশ্বরী ফুকোননীর নামও এক্ষেত্রে স্মরণীয় হয়ে আছে।
সুভাষচন্দ্র বসু যে আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠন করেছিলেন তাতেও নারীদের অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। এই বাহিনীতে ঝাঁসির রানি ব্রিগেডের নেত্রী ছিলেন লক্ষ্মী স্বামীনাথন। প্রায় ১৫০০ নারী এই বাহিনীতে যোগদান করেছিলেন।