টীকা লেখো রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি (1939 খ্রিস্টাব্দ) – আজকের পর্বে টীকা লেখো রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি (1939 খ্রিস্টাব্দ) আলোচনা করা হল।
টীকা লেখো রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি (1939 খ্রিস্টাব্দ)
টীকা লেখো: ‘রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি’ (1939 খ্রিস্টাব্দ)। |
রুশ জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি
সাম্যবাদ বিরোধী বা অ্যান্টি-কমিন্টার্ন চুক্তি স্বাক্ষর করা সত্ত্বেও সুচতুর হিটলার জার্মান বিরোধী জোট ভেঙে তাঁর একের পর এক নীতিকে কার্যকর করার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। এজন্য তিনি রাশিয়াকে অনাক্রমণ চুক্তির প্রস্তাব দেন। স্ট্যালিন 1939 খ্রিস্টাব্দে রুশ-জার্মানি অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির দ্বারা দুই স্বাক্ষরকারী দেশ 10 বছরের জন্য পরস্পরকে আক্রমণ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়। উভয় দেশের মধ্যে বিরোধগুলি তারা আলাপ-আলোচনায় মীমাংসা করতে রাজি হয়। এই সন্ধির একটি গোপন শর্তের দ্বারা উভয় দেশ পোল্যান্ডকে পরস্পরের মধ্যে ভাগ করার জন্য রাজি হয় এবং ইউরোপে নিজ নিজ প্রভাবাধীন এলাকা স্থির করে।
চুক্তির গুরুত্ব
এই চুক্তির দ্বারা পূর্ব পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড দুই বাল্টিক রাষ্ট্রকে রাশিয়ার অধীনে এবং বাল্টিক পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়াকে জার্মানির অধীনে আনার ব্যবস্থা হয়। এই সন্ধির দ্বারা স্ট্যালিন মনে করেন যে, জার্মান আক্রমণের হাত থেকে তিনি রাশিয়াকে আপাতভাবে রক্ষা করেছেন। অপরদিকে, জার্মানি মনে করে যে, জার্মানির বিরুদ্ধে ইঙ্গ-ফরাসি জোট থেকে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করা গেছে। জার্মানির আক্রমণের ফলে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির পতন ঘটলে তখন জার্মানির পক্ষে রাশিয়াকে আক্রমণ করা সহজ হবে। কিন্তু বাস্তবে দুই পক্ষ জানত যে, এই সন্ধি স্থায়ী হওয়ার সম্ভবনা কম। তবে আপাতত যুদ্ধ থেকে রাশিয়াকে নিরপেক্ষ রেখে স্ট্যালিন এই সন্ধির দ্বারা ভবিষ্যতে জার্মানির আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিতে পারেন। পশ্চিমি ঐতিহাসিকরা রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির জন্য রাশিয়ার সুবিধাবাদী আদর্শহীন স্বার্থপর নীতির তীব্র নিন্দা করেন। কিন্তু তাঁরা ভুলে যান যে, 1933-38 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পশ্চিমি শক্তিগুলির মিত্রতা লাভের জন্য রাশিয়া আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি ছিল ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির অতি চালাকির ফল এবং রাশিয়াকে কোণঠাসা করার নীতির পরিণাম।