নির্বাণ কী? নির্বাণের স্বরূপ আলোচনা করো

নির্বাণ কী? নির্বাণের স্বরূপ আলোচনা করো

নির্বাণ কী? নির্বাণের স্বরূপ আলোচনা করো
নির্বাণ কী? নির্বাণের স্বরূপ আলোচনা করো

নির্বাণের ধারণা

ভূমিকা

নির্বাণ হল বৌদ্ধ দর্শনের একটি মূল আলোচ্য বিষয়। অন্যান্য দার্শনিক সম্প্রদায়ে যাকে মোক্ষ বা মুক্তিরূপে উল্লেখ করা হয়েছে, বৌদ্ধ দর্শনে তাকেই বলা হয়েছে নির্বাণ। দুঃখের মূল কারণ হল অবিদ্যা। এই অবিদ্যা দূরীভূত হলে দুঃখের নিবৃত্তি সম্ভব। দুঃখের চিরকালীন নিবৃত্তিকেই বৌদ্ধ দর্শনে নির্বাণরূপে অভিহিত করা হয়েছে।

নির্বাণের আক্ষরিক অর্থ

‘নির্বাণ’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল-নিভে যাওয়া বা অবলুপ্ত হওয়া। কাঠ পুড়ে গেলে যেমন আগুন নিভে যায়, আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকে না, তেমনি দুঃখের কারণগুলি অবলুপ্ত হলে, দুঃখেরও আত্যন্তিক নিবৃত্তি হয়। দুঃখের এরূপ অবলুপ্ত অবস্থাকেই বলা হয় নির্বাণ।

নির্বাণের স্বরূপ

নির্বাণের স্বরূপ নিয়ে বৌদ্ধ দার্শনিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। কেউ কেউ নির্বাণকে ইতিবাচকরূপে এবং কেউ কেউ নির্বাণকে নেতিবাচকরূপে উল্লেখ করেছেন। আবার কেউ কেউ নির্বাণকে সদসৎ-রূপেও উল্লেখ করেছেন।

ইতিবাচক স্বরূপ

বৈভাষিক সম্প্রদায় এবং নাগসেন, অশ্বঘোষ প্রমুখ বৌদ্ধ দার্শনিকগণ নির্বাণকে ইতিবাচকরূপে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে, নির্বাণ হল জীবের পরম প্রাপ্তি। এ হল এক আনন্দময় অবস্থা।

নেতিবাচক স্বরূপ

কিন্তু সৌত্রান্তিক সম্প্রদায় নির্বাণকে নেতিবাচকরূপে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে নির্বাণ হলে আর পুনর্জন্ম হয় না, দুঃখের নিবৃত্তি ঘটে।

সদসৎ স্বরূপ

নাগার্জুন নির্বাণকে সদসৎ (সৎ এবং অসৎ) রূপে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, নির্বাণ ভাবাত্মকও নয়, আবার অভাবাত্মকও নয়। চিন্তার কোনো কোটি বা পক্ষের মাধ্যমেই নির্বাণকে ব্যাখ্যা করা যায় না। সে কারণেই নির্বাণকে বলা হয় চতুষ্কোটিবিনির্মুক্ত। তবে নির্বাণ যে এক দুঃখমুক্ত অবস্থা, তাতে কোনো সন্দেহই নেই। এ হল এক পরম সুখ। ধম্মপাদে তাই বলা হয়েছে-নির্বাণং পরমং সুখম্।

শাশ্বত অপরিবর্তনীয় স্বরূপ

অনেকে দাবি করেন যে, নির্বাণ হল এক শাশ্বত অপরিবর্তনীয় অবস্থা স্বরূপ। কারণ, নির্বাণের কোনো উৎপত্তি নেই, আবার তার বিনাশও নেই। এ হল এক অভূত, অজাত এবং অসংস্কৃত অবস্থার মতো। একে শুধুমাত্র চিন্তার দ্বারা উপলব্ধিই করা যায়। কোনো লৌকিক ভাষায় একে ব্যাখ্যা ও প্রকাশ করা যায় না।

জীবনমুক্তি স্বরূপ

বুদ্ধদেবের মতে, নির্বাণ হল জীবনমুক্তি স্বরূপ, অর্থাৎ জীবের জীবিত অবস্থায় দুঃখদুর্দশা থেকে মুক্তিলাভ। জীব যখন তার কামনাবাসনাকে পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হয়, তখন সে সমস্ত প্রকার আসক্তি থেকে মুক্ত হয়। চারটি আর্যসত্যের নিয়ত অনুধ্যানের দ্বারা জীব সমাধির চারটি স্তরের মধ্যে দিয়ে পূর্ণ প্রজ্ঞার স্তরে উন্নীত হয়। তখন তাঁকে বলা হয় ‘অর্হৎ’ বা ‘প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তি’। এরূপ অবস্থায় কামনাবাসনা দগ্ধ হয়ে জীবের নির্বাণ লাভ হয়।

আরও পড়ুন – সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরী রচনা

Leave a Comment