দলিত সম্প্রদায়ের আন্দোলনের নেতৃত্ব ও আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো। |
ভূমিকা
দলিত কারা
প্রতিবাদী আন্দোলন
নেতৃত্ব: ভারতে ইংরেজ শাসনের সুফল দলিত শ্রেণির কিছু মানুষ পেয়েছিল। মিশনারিদের উদ্যোগে এদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার ঘটে। বিভাজন ও শাসননীতির সুযোগ থাকায় সরকার এই শ্রেণিকে কিছু কাজে (পুলিশ, সৈনিক প্রভৃতি) নিয়োগ করেছিল। ফলে এই শ্রেণির মধ্যে একটি ছোটো আলোকিত শ্রেণি (elite) গড়ে ওঠে। এই আলোকিত শ্রেণিই তাদের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসে এবং নিজেদের দুরবস্থা সম্বন্ধে তাদের সচেতন করে তোলে।
জ্যোতিরাও ফুলে: ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত জ্যোতিরাও ফুলে ছিলেন জাতিতে মালি এবং পেশায় কৃষক। তিনি মহারাষ্ট্রের কুনবি, মালি, মাঙ, মাহার প্রভৃতি জাতপাত- বর্ণভেদে জর্জবিত শ্রেণির মধ্যে ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রচার চালান। তিনি ‘গুলামগিরি’ গ্রন্থে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে জাতিভেদ প্রথা ও অবহেলিতদের দুর্দশার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ‘ব্রাহ্মণচে কসাব’ (ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের স্বরূপ) এবং ‘শ্বেতকার্যচ অসুদ’ (কৃষকদের চাবুক) নামে ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের বিরোধিতা ও প্রতিবাদ বিষয়ক দুটি গ্রন্থও রচনা করেন তিনি। এ ছাড়া সমাজসংস্কারের জন্য ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে সত্যশোধক সমাজ গড়ে তোলেন। পুনাতে তিনি অস্পৃশ্যদের জন্য দুটি ও বালিকাদের জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিধবাদের কল্যাণের জন্য তিনি বিভিন্ন সাহায্যমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
শ্রী নারায়ণ গুরু: শ্রী নারায়ণ গুরু কেরলের হিন্দুসমাজের অন্ত্যজ এজহাবা সম্প্রদায়ে জন্মগ্রহণ করেন। এজহাবা, নাদার ও অন্যান্য নিম্নবর্ণের মানুষদের দুরবস্থা ও অমর্যাদা দূর করার জন্য ‘এক জাতি, এক বর্ণ, এক ঈশ্বর’- এই আহ্বান জানিয়ে ধর্মসংস্কারের কাজ শুরু করেন।
সংস্কৃত ভাষায় পণ্ডিত শ্রী নারায়ণ গুরু এজহাবাদের জন্য ৬৪টি মন্দির তৈরি করেন। এজহাবাদের মধ্যে থেকেই তিনি পুরোহিত নিয়োগ করেন। মন্দিরগুলি পরিচালনার জন্য তিনি শ্রী নারায়ণ ধর্মপালন যোগম প্রতিষ্ঠা করেন ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে। এজহাবা সম্প্রদায়ই পরে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে টি কে মাধবনের নেতৃত্বে হিন্দু মন্দিরে প্রবেশাধিকারের দাবিতে ভাইকম সত্যাগ্রহ করে।
শ্রী নারায়ণ গুরু নিজে একটি বিদ্যালয় পরিচালনা করতেন। তিনি এজহাবাদের শিক্ষাপ্রসারে উদ্যোগী হন। বিবাহ, অন্নপ্রাশন, পারলৌকিক কাজের জন্য ব্যয়সংকোচ করে সেই অর্থে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করেন। মাদক বর্জনেরও ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি।
বীরেশলিঙ্গম পান্তুলু: পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বীরেশলিঙ্গম দক্ষিণ ভারতে সমাজসংস্কার আন্দোলন শুরু করেন। অন্ধ্রের রাজমুন্দ্রি ছিল তাঁর কর্মকেন্দ্র। সংঘ সমাসকরণ সমাজম ছিল তাঁর সংগঠন (১৯৭৮ খ্রি.)। তিনি ‘ব্রাহ্ম বিরাহম’ ও ‘পাড়ায়াগরি পোল্লি’ নামে দুটি নাটক এবং ‘সত্য রাজাচর্য পর্বদেশ যাত্রানু’ নামে ব্যঙ্গরচনা দ্বারা অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদ প্রথা, দেবদাসী প্রথা ও মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে প্রচার করেন। তিনি পিথাপুরমের রাজার সাহায্যে দেবদাসীদের কল্যাণের ব্যবস্থা করেন। বিধবাবিবাহ এবং জনশিক্ষা ও বৃত্তিশিক্ষার ব্যবস্থা করেন।
রাজনৈতিক আন্দোলন
আম্বেদকর লন্ডনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড এই বৈঠকে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণা করেন। এর দ্বারা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মতো অনুন্নত তফশিলি সম্প্রদায়ের আসন সংরক্ষিত হয়। হিন্দুদের বিভাজনের অজুহাতে গান্ধিজি অনশন শুরু করেন। আম্বেদকর দাবি ত্যাগে অসম্মত হন এবং শেষে প্রাপ্ত আসনের দ্বিগুণ লাভের বিনিময়ে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর দুই পক্ষে পুনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচনার সময় আম্বেদকর প্রাপ্ত সুবিধাগুলির সংরক্ষণ করেন।