‘দাম’ ছোটোগল্পে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের কী পরিচয় পাওয়া যায়? এই সম্পর্কটির বর্তমান পরিণতি কীরূপ? |
শ্রেণিতে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দাম’ গল্পে ফুটে উঠেছে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের একটি অদ্ভুত নিদর্শন। আলোচ্য গল্পের কথক সুকুমারের ছেলেবেলার স্কুলের এক মাস্টারমশাই ছিলেন তাদের কাছে বিভীষিকাস্বরূপ। তিনি তাঁর ভয়ংকর শাস্তি-শাসনে কথকদের মতো ছাত্রদের কাছে অঙ্ক বিষয়টিকেই করে তুলেছিলেন ভয়াবহ। মাস্টারমশাই-এর গলার স্বর শুনলে ছাত্রদের বুকের রক্ত হিম হয়ে যেত ভয়ে। পুরুষ মানুষ হয়ে অঙ্ক না পারাটা ছিল তাঁর কাছে অকল্পনীয় ব্যাপার। অঙ্ক কষতে না পারা ছেলেদের তিনি পা ধরে ছুঁড়ে স্কুলের পুকুরে ফেলে দেওয়ার হুংকার দিতেন। এ হেন আনন্দহীন শিক্ষার পরিবেশে ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকের সম্পর্ক ছিল ভয়ের। তবে মাস্টারমশাই-এর অঙ্ক কষার আশ্চর্য দক্ষতা দেখে ছাত্ররা ভক্তিও করত তাঁকে। অঙ্কে অসম্ভব পারদর্শিতা ছিল মাস্টারমশাই-এর। যে-কোনো জটিল অঙ্ক একবার দেখে নিমেষে সেটি কষে ফেলতে পারতেন তিনি। ছাত্ররা অবাক বিস্ময়ে তা দেখত এবং রোমাঞ্চিত হয়ে যেত।
পরবর্তীকালে উভয়ের সম্পর্ক
পরবর্তীকালে অবসরপ্রাপ্ত মাস্টারমশাই-এর সঙ্গে পুনরায় সাক্ষাৎ হলে কথক দেখেছেন তাঁর ভিন্ন রূপ। স্কুলের বিভীষিকা সেই মাস্টারমশাই প্রাক্তন ছাত্রের প্রতিষ্ঠার কাছে নতি স্বীকার করেছেন একপ্রকার। আবেগাপ্লুত মাস্টারমশাইকে দেখে কথকও প্রণাম করেছেন। কথকের মনে জমে থাকা অভিমান মাস্টারমশাই-এর অসীম স্নেহ-মমতা-ক্ষমার রসে দ্রবীভূত হয়ে গেছে অনায়াসে। ছাত্র হিসেবে কথক মাস্টারমশাই-এর জীবনাদর্শকে সম্মান জানিয়েছেন।
সম্পর্কের বর্তমান পরিণতি
বর্তমানে সমাজপরিস্থিতি বদলের কারণে পরিবর্তিত হয়েছে মানুষের জীবনদর্শন। আদর্শবোধের ছিটেফোঁটা বেঁচে নেই মানুষের মনে। মূল্যবোধকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ নেই কারও। তাই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে সন্দেহ নেই। পাস-ফেল প্রথা উঠে যাওয়ায়, আইন করে শিক্ষকদের শাস্তি দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় ছাত্রদের মধ্যে ফাঁকিবাজি করার মানসিকতা বেড়েছে। বিশ্বায়নের বিষ এমন আকণ্ঠ পান করছে বর্তমান প্রজন্ম যে, প্রাচীন সম্পর্কের বন্ধনগুলি ক্রমে আলগা হয়ে গেছে। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের সে মাধুর্য হারিয়ে গেছে স্বাভাবিক কারণেই।