নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দাম’ গল্পের কথক তথা সুকুমারের চরিত্র আলোচনা করো। |
মাস্টারমশাইকে ভয় ও ভক্তি
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দাম’ গল্পের কথকের নাম সুকুমার। বর্তমানে তিনি একটি কলেজে বাংলা পড়ান। শৈশবে স্কুলজীবনে মাস্টারমশাইয়ের শাস্তি-শাসনে তার মনে তৈরি হয়েছিল অঙ্ক বিষয়ে ভীতি। তাই অঙ্ক তার শেখা হয়ে ওঠেনি। তবে মাস্টারমশাইয়ের অঙ্ক কষার আশ্চর্য দক্ষতা দেখে অভিভূত হয়ে যেতেন কথক। ভয়ের সঙ্গে মাস্টারমশাইকে ভক্তি করার মতো মন ছিল সুকুমারের।
আত্মগ্লানি
কলেজে চাকরিসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণ পেতেন কথক। রবীন্দ্র জন্মোৎসব থেকে বনমহোৎসব সব অনুষ্ঠানে বলা যায় এমন এক ‘সর্বার্থসাধক’ বক্তৃতা বানিয়ে রেখেছিলেন তিনি। এ বিষয়ে তার সচেতনতা থাকলেও বক্তব্যকে সারগর্ভ করে তোলার কোনো প্রয়াস তার ছিল না। এই সূত্রে তাকে ফাঁকিবাজ বলা চলে। তবে তিনি নিজেও সে-কথা স্বীকার করেছেন অকপটে। বক্তব্যের মাঝে রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতি ব্যবহার করে, অন্য কারও লেখা বার্নার্ড শ-এর নামে চালিয়ে দিয়ে অবলীলায় তিনি বহু মানুষের বাহবা কুড়িয়েছেন। তবে তার আত্মগ্লানি হয়েছে, যখন জেনেছেন মাস্টারমশাই তার বক্তব্য শুনেছেন। বহুদিন পর মাস্টারমশাই-এর সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি বিনীত ছাত্রের মতোই শ্রদ্ধাবনত চিত্তে তাঁকে প্রণাম করেছেন। মাস্টারমশাইকে নিয়ে গল্প লিখতে গিয়ে কল্পনার আশ্রয় নিয়েছিলেন, উপদেশ বর্ষণ করেছিলেন বলে শেষে তার অনুশোচনা হয়েছে, লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করেছে। আলোচ্য গল্পে কথক সুকুমারের আত্মোপলব্ধি শেষপর্যন্ত তাঁকে একজন আদর্শবান মানুষ ভাবতে সাহায্য করেছে।