‘স্কুলে কী বিভীষিকাই যে ছিলেন ভদ্রলোক!” ভদ্রলোকের চরিত্র আলোচনা করো

'স্কুলে কী বিভীষিকাই যে ছিলেন ভদ্রলোক!" ভদ্রলোকের চরিত্র আলোচনা করো
‘স্কুলে কী বিভীষিকাই যে ছিলেন ভদ্রলোক!” ভদ্রলোকের চরিত্র আলোচনা করো।

অঙ্কে পারদর্শিতা

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দাম’ গল্পে স্কুলের বিভীষিকা স্বরূপ ভদ্রলোকটি হলেন কথকের ছেলেবেলার অঙ্কের মাস্টারমশাই। অঙ্কে ছিল তাঁর আশ্চর্য পরিষ্কার মাথা। নিপুণ দক্ষতায় যে-কোনো অঙ্ক একবার দেখেই তিনি কষে ফেলতে পারতেন নিমেষে। পুরুষ মানুষ হয়ে অঙ্ক না পারাটা ছিল তাঁর কাছে অকল্পনীয় ব্যাপার। নাছোড়-মানসিকতা নিয়ে যে-কোনো উপায়ে তিনি ছাত্রদের শেখাতে চাইতেন অঙ্ক। ভয়ংকর শাস্তি-শাসনে ছাত্রদের পারদর্শী করে তুলতে চাইতেন তিনি নিজের মতোই। আসলে ছাত্রদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণের লক্ষ্যে সর্বদা নিয়োজিত থাকতেন আদর্শবান এই অঙ্কের মাস্টারমশাই।

আদর্শ শিক্ষক

অবসরের পর মাস্টারমশাই আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশের এক প্রান্তের একটি শহরে নির্বিবাদে জীবন কাটানোর অভিপ্রায়ে। বহুকাল পর প্রাক্তন ছাত্র সুকুমারের সঙ্গে দেখা হলে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন, চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। ছাত্র সুকুমার কলেজে চাকরি পেয়েছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ছাত্রের প্রতিষ্ঠায় নিজেকে সম্মানিত মনে করেছেন উদারমনস্ক মাস্টারমশাই। সুকুমার তাঁকে নিয়ে কল্পনার রং মিশিয়ে, উপদেশ বর্ষণ করে পত্রিকায় গল্প লিখেছে জেনেও মাস্টারমশাই আনন্দ পেয়েছেন। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে ছাত্রের এই অবমাননাটুকুও সুন্দর হয়ে উঠেছে তাঁর কাছে। তিনি ভেবেছেন তাঁকে নিয়ে গল্প লিখে ছাত্র তাঁকে অমর করে দিয়েছে। সময়ের ব্যবধান তাঁর মধ্যে সৃজন করেছে যে দূরত্ব, সেখানে দাঁড়িয়ে একটি চিঠি লিখেও তিনি পাঠাতে সাহস পাননি সুকুমারকে। বয়সে ছোটো হলেও ছাত্র সুকুমারের সামাজিক প্রতিষ্ঠাকে তিনি সম্মান করেছেন। তাঁর অসীম স্নেহ, অপরিমেয় মমতা শেষপর্যন্ত বর্ষিত হয়েছে ছাত্রের উপর। এককথায় তিনি আদর্শ শিক্ষকের ভূমিকাই পালন করেছেন।

Leave a Comment