‘সে স্বর্গের চাইতে লক্ষ যোজন দূরে থাকাই আমরা নিরাপদ বোধ করতুম।’ -‘সে স্বর্গ’ বলতে কোন স্বর্গের কথা বোঝানো হয়েছে? কেন কথক সে স্বর্গের থেকে দূরে থাকতে চাইতেন?

'সে স্বর্গের চাইতে লক্ষ যোজন দূরে থাকাই আমরা নিরাপদ বোধ করতুম।' -'সে স্বর্গ' বলতে কোন স্বর্গের কথা বোঝানো হয়েছে? কেন কথক সে স্বর্গের থেকে দূরে থাকতে চাইতেন
‘সে স্বর্গের চাইতে লক্ষ যোজন দূরে থাকাই আমরা নিরাপদ বোধ করতুম।’ -‘সে স্বর্গ’ বলতে কোন স্বর্গের কথা বোঝানো হয়েছে? কেন কথক সে স্বর্গের থেকে দূরে থাকতে চাইতেন?

যে স্বর্গের কথা বলা হয়েছে

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দাম’ গল্প থেকে নেওয়া আলোচ্য উদ্ধৃতিটিতে ‘সে স্বর্গ’ বলতে কথক সুকুমারের তথা ছাত্রদের মনে মাস্টারমশাই-এর তৈরি করে দেওয়া কল্পিত স্বর্গের কথা বোঝানো হয়েছে। যে স্বর্গে পা দিলেই জ্যামিতির এক্সট্রা কষতে হবে কিংবা স্কোয়ার মেজারের অঙ্ক নিয়ে বসতে হবে বলে বিশ্বাস করতেন কথক ছেলেবেলায়।

স্বর্গ থেকে দূরে থাকতে চাওয়ার কারণ

স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাইকে কথক এবং অন্যান্য ছাত্ররা খুব ভয় পেত। মাস্টারমশাই ছিলেন স্কুলের বিভীষিকা। মাস্টারমশাই-এর নাছোড় মানসিকতা ছাত্রদের কাছে অঙ্ক বিষয়টিকেই ভয়াবহ করে তুলেছিল। তাঁর প্রকাণ্ড হাতের প্রচণ্ড চড় খেয়ে চোখে জল এসে যেত কথকদের। মেধাবী ছাত্ররাও তাঁর ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকত। পুরুষ মানুষ হয়ে অঙ্ক করতে না পারাটা ছিল মাস্টারমশাই-এর কাছে অকল্পনীয় ব্যাপার। অঙ্ক করতে না পারলে তিনি পা ধরে ছুঁড়ে স্কুলের পুকুরে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখাতেন ছাত্রদের। তাঁর গলার স্বর শুনেই ছাত্রদের বুকের রক্ত হিম হয়ে যেত। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণের লক্ষ্যে যে-কোনো উপায়ে তিনি ছাত্রদের অঙ্ক শেখাতে চাইতেন। কিন্তু তাঁর ভয়ংকর শাস্তি ও শাসন অঙ্ক বিষয়টিকেই ভয়াবহ করে তুলেছিল ছাত্রদের কাছে। মাস্টারমশাই বলতেন প্লেটোর দোরগোড়ায় এমনকি স্বর্গের দরজাতেও প্রবেশ করা যাবে না যদি অঙ্ক শেখা না হয়। কিন্তু কথকদের মনে মাস্টারমশাই এমন ভয়ের কঙ্কাল নির্মাণ করে দিয়েছিলেন যে, তাদের মনে হত স্বর্গে প্রবেশ করেই জ্যামিতির এক্সট্রা কষতে হবে কিংবা স্কোয়ার মেজারের অঙ্ক নিয়ে বসতে হবে। সুতরাং স্বর্গসুখ থেকে কথক লক্ষ যোজন দূরে থাকতে চাইতেন।

Leave a Comment