ইলিয়াস’ গল্পে যে জীবনদর্শন ব্যক্ত হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করো। |
ইলিয়াসের জীবন
‘ইলিয়াস’ গল্পে ইলিয়াস প্রধান চরিত্র। সমগ্র গল্পটিতে এই চরিত্রের সামগ্রিক উত্থান ও পতনের ছবিটি চিত্রিত হয়েছে, তার এই উত্থানপতনেই গল্পের মূল সুর ফুটে উঠেছে। একসময়ের সম্পন্ন ব্যক্তি ইলিয়াস ভাগ্যের পরিহাসে গরিব হয়ে পড়েছে। তখন তার আশ্রয়স্থল মহম্মদ শা। সেখানে থেকে নানা কাজকর্ম করেই সে দিনাতিপাত করছিল। প্রথম জীবনে সে যথাযথ সম্পত্তির মালিক না থাকলেও পরবর্তীতে কিন্তু প্রচুর সম্পত্তি করেছিল। অথচ পুত্রদের কোলাহল ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক কারণে সেই সম্পত্তিকে ধরে রাখতে পারেনি সে, ফলে অসহায় হয়ে পড়েছে সে। মহম্মদ শার বাড়িতে কাজ করার সময় অতিথি অভ্যাগতদের চোখে পড়েছে সে। খোঁজ নিয়ে তারা জেনেছে একসময় ইলিয়াস ছিল দানবীর, কিন্তু আজ তাকেই দানের অন্ন গ্রহণ করতে হয়। সেকারণে ইলিয়াসের জীবন অভিজ্ঞতার আয়তনও নেহাত কম নয়।
ভাঙাগড়ার জীবন
টলস্টয় উল্লিখিত গল্পের মধ্য দিয়ে মানবজীবনের ভাঙা -গড়ার চিত্রটিও তুলে ধরেছেন। এই ভাঙাগড়ার জীবনে ইলিয়াস পূর্ণ তাই তার স্বভাবও শান্ত। কিন্তু সর্বহারা হবার পরে মালিকের বাড়িতে থেকে তাদের সেবা করাকেই সে তার জীবনের অন্যতম কর্তব্য বলে মেনে নিয়েছিল। অতীতের জন্য তার মনে কোনোরকম হীনম্মন্যতা বা জীবনযন্ত্রণা তাকে পিছিয়ে দেয়নি বা ভারাক্রান্ত করেনি। শ্রম ও নিষ্ঠাকে সঙ্গী করেই সে এগিয়ে চলেছে।
জীবনের স্বরূপ উদ্ঘাটন
জীবনের অন্তিমে পৌঁছে ইলিয়াস ও তার পত্নী উপলব্ধি করেছিল জীবনে সাফল্য কখনও লোকবলে হয় না। জীবন ভোগের জন্য যেমন নয়, তেমন যন্ত্রণার জন্য নয়। জীবন শান্তির। এই শান্তির সন্ধানই সে তার প্রভুর বাড়িতে খুঁজে পেয়েছিল। সে এজন্য ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। ইলিয়াসের এই উপলব্ধি যখন বন্ধুমহলে উত্থাপিত হল তখন অবুঝের মতো তারাও হেসে উঠল, কিন্তু এ প্রসঙ্গে ইলিয়াসের উক্তি- ‘বন্ধুগণ হাসবেন না। এটা তামাশা নয়। এটাই মানুষের জীবন, আমার স্ত্রী আর আমি অবুঝ ছিলাম, তাই সম্পত্তি হারিয়ে কেঁদেছিলাম। কিন্তু ঈশ্বর আমাদের কাছে সত্যকে উন্মুক্ত করেছেন।’
এইভাবেই ইলিয়াস তার জীবনের স্বরূপকে উপলব্ধি করেছিল। তার এখানেই ইলিয়াসের জীবনদর্শনটি ধরা পড়েছে।