‘যতদিন ধনী ছিলাম, কখনও সুখ পাইনি।’-ধনী অবস্থায় ইলিয়াসের সংসারে সুখ ছিল না কেন? দুঃখের জীবন থেকে বুড়োবুড়ি কীভাবে সুখের জীবন লাভ করল? |
ধনী অবস্থায় ইলিয়াসের সংসারে সুখ না থাকার কারণ
৩৫ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে ইলিয়াস প্রভূত সম্পত্তির অধিকারী হয়েছিল। এইসময় তার কোনো অভাব অনটন ছিল না, সংসারে শান্তি ছিল অটুট। পাশাপাশি ভালো ভালো লোকের সঙ্গে পরিচয় হতে লাগল, কিন্তু এই সুখ বেশিদিন টিকল না। অত্যন্ত ধনী হওয়ার কারণে তার ছেলেরা আয়েশি হয়ে উঠল। বড়োটি এক মারামারিতে পড়ে মারা গেল। ছোটোটি এমন ঝগড়াটে মেয়ে বিয়ে করল যে বাবা মাকে অমান্য করতে শুরু করল। এজন্য তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হল। ইলিয়াস তাকে একটা বাড়ি দিল, কিছু গোরু-ঘোড়াও ছিল। এতেই ইলিয়াসের সম্পত্তিতে টান পড়ল। ইলিয়াস এরপর ধীরে ধীরে গরিব হয়ে যেতে লাগল। ধনী অবস্থায় ইলিয়াসের শান্তি চলে গেল, সর্বদা কীভাবে সকলকে খুশি রাখবে সেই চিন্তায় তারা তৎপর থাকত। এ প্রসঙ্গে তাদের স্পষ্ট স্বীকারোক্তি- “যখন ধনী ছিলাম, বুড়োর বা আমার এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি ছিল না, -কথা বলবার সময় নেই।”
শুধু তাই নয়, এর উপরে অতিথি আগমনের প্রসঙ্গে বলেছে-‘হয়তো অতিথিরা এলেন-এক দুশ্চিন্তা; কাকে কী খেতে দিই, কী উপহার দিই যাতে লোকে নিন্দা না করে।’
সব সময় দুশ্চিন্তা নানা বিষয় নিয়ে লেগেই থাকত, সেই প্রসঙ্গে দুশ্চিন্তার কথা বলা হয়েছে।
বুড়োবুড়ির সুখের জীবনলাভ
যখন ইলিয়াস সর্বহারা হয়ে পড়ল তখন তার সঙ্গী ছিল শুধুমাত্র স্ত্রী ও একটি বোঁচকা। এইসময় ইলিয়াসের নতুন করে হারানোর আর কিছু ছিল না। নিশ্চিন্তে মহম্মদ শা-র কাছে কাজ করে দিত। এই সময় তারা তাদের প্রকৃত সুখ ফিরে পেয়েছিল। এ প্রসঙ্গে তার স্ত্রীর উক্তি- ‘এখন বুড়ো আর আমি একসঙ্গে সকালে উঠি, দুটো সুখ-শান্তির কথা বলি। ঝগড়াও কিছু নেই, দুশ্চিন্তাও কিছু নেই,’
সর্বোপরি যে মানসিক শান্তির সন্ধান পেয়েছিল এইসময় তা হল ঈশ্বর দর্শনচিন্তা বা আধ্যাত্মিক চেতনার। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার জন্য এখন তারা যথেষ্ট সময় পায়। মোটকথা সর্বহারা হবার পরেই তাদের জীবনে তারা সুখের খোঁজ পেয়েছিল। তাই উল্লিখিত মন্ত্যব্যটি করা হয়েছে।