‘প্রলয় গণিয়া প্রজা ভাবয়ে বিষাদ।’-কোন্ দেশের প্রজার কথা বলা হয়েছে? তাদের এমন দুর্দিন কেন তা লেখো। |
প্রজাদের দুর্দিন আসার কারণ
কলিঙ্গরাজ্যে হঠাৎ ঈষাণ কোণ থেকে মেঘসঞ্চার ঘটে। ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র আকাশে। ক্রমাগত সাতদিন ধরে অবিরত বৃষ্টিধারা আর ঝড়ের তাণ্ডব চলতেই থাকে। মহাপ্লাবনের সূচনা হয়। শস্যখেত ডুবে গিয়ে সমাজজীবনের পর্যাপ্ত ক্ষতিসাধন হয়।
জল-স্থলের পার্থক্য মুছে যায়, মানুষের ঘরবাড়ি ক্রমে জলমগ্ন হয়ে পড়ে। মনে হয় যেন উত্তুরে বাতাস তীব্র গতিতে ধেয়ে এসে সবকিছুকে লণ্ডভণ্ড করে দেবে। আকাশে ঘনচিকুর, সুতীব্র মেঘগর্জন, ঘনঘন বজ্রপতন। কলিঙ্গের প্রজাসাধারণ যেন দিশাহারা হয়ে পড়ে। প্রবল বর্ষণের সঙ্গে আকাশ থেকে নেমে আসা বড়ো বড়ো শিলা ঘরের চাল ভেদ করে মেঝেতে এসে ভাদ্রের তালের মতো পড়ে থাকে। যেন মনে হয় আট দিকের । আটটি হাতি তাদের শুঁড়ের সাহায্যে বারিবর্ষণ করে চলেছে।
দৈবাদেশে বীর হনুমান যেন তীব্র ঝড়ের আকারে কলিঙ্গে চালায় ধ্বংসলীলা। মঠ-অট্টালিকা সেকারণে ভেঙে খানখান হতে থাকে। দৈবাদেশেই নদনদী তুফানে পরিণত হয়ে আগ্রাসী জলস্রোত হয়ে ধেয়ে আসে কলিঙ্গের দিকে, ঘরবাড়ি সব পর্বতপ্রমাণ ঢেউ-এর মাথায় টলমল করে দুলতে থাকে। গর্তবাসী সর্পকুলও ভয়ে মাটি ছেড়ে জলের উপর ভেসে বেড়াতে থাকে। এমতাবস্থায় যা হতে থাকে, অর্থাৎ প্রকৃতির ভয়ংকর রূপ দেখে আতঙ্কগ্রস্ত প্রজারা বজ্র নিবারক ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করতে থাকে। এসবের পিছনে দৈবাদেশ কাজ করে। তবে এমন দুর্দিনে প্রজারা যে নিদারুণ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল এবিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না।