‘নাহি জানি জলস্থল কলিঙ্গ-মণ্ডলে।’-বক্তা কে? কোথায়, কোন্ পরিস্থিতিতে তিনি এ কথা বলেছেন

'নাহি জানি জলস্থল কলিঙ্গ-মণ্ডলে।'-বক্তা কে? কোথায়, কোন্ পরিস্থিতিতে তিনি এ কথা বলেছেন
‘নাহি জানি জলস্থল কলিঙ্গ-মণ্ডলে।’-বক্তা কে? কোথায়, কোন্ পরিস্থিতিতে তিনি এ কথা বলেছেন?
প্রশ্নোধৃত উদ্ধৃতিটির বক্তা স্বয়ং কবি কবিকঙ্গণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী।

প্রজাদের ভয়

কবি তাঁর ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কাব্যাংশে চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে বিপর্যয়ের বর্ণনা প্রসঙ্গে উদ্ধৃতিটির অবতারণা করেছেন। কলিঙ্গের আকাশে হঠাৎ ঘন কালো মেঘের আবির্ভাব হয় এবং ঈশান কোণ থেকে ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র কলিঙ্গ আকাশে। মেঘের ঘনান্ধকারে প্রজারা কেউ কারও প্রজাদের ভয় অঙ্গ দেখতে পায় না। উত্তুরে বাতাস জোরদার হয়, ঘন মেঘ বিদ্যুতের তীব্র ঝলক হানে। চারি মেঘে মুষলধারে বর্ষণ শুরু হয়। জোরালো মেঘবর্ষণের ফলে সৃষ্টি হয় উচ্চনাদ, প্রজারা আশঙ্কা করে বুঝি প্রলয়কাল ঘনিয়ে এসেছে; বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে যায় তাদের মন। সেই বিষাদই একসময় তাদের ঘরছাড়া করে, যখন ঘন ঝড় প্রবাহিত হতে শুরু করে। তখন প্রজারা বিপাকে পড়ে ঘড়বাড়ি ছেড়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে।

ভয়জাত পরিস্থিতি

কলিঙ্গের হরিৎক্ষেত্র ধূলি মলিন হয়ে পড়ে, শস্য ধ্বংস হতে শুরু করে। মনে হয় বুঝি অষ্ট গজরাজ চারি মেঘ বারিবর্ষণ করে চলেছে। রাস্তাঘাট জলে ডুবে একাকার হয়ে যায়। কেবল সুতীব্র মেঘগর্জন, ঘন ঘন বজ্রপতন ঘটে চলে। কেউ কারও কথা শুনতে পায় না। প্রলয়কালীন পরিস্থিতিতে-“পরিচ্ছিন্ন নাহি সন্ধ্যা দিবস রজনী।/কলিঙ্গে সোঙরে সকল লোক যে জৈমিনি।।” পরিস্থিতি এত ঘোরালো হয়ে পড়ে যে, গর্তবাসী সর্পকুলকেও মাটি ছেড়ে উঠে এসে জলের উপর ভেসে বেড়াতে দেখা যায়। অর্থাৎ মহাপ্লাবনে জল ও স্থল পৃথক করা যায় না। এরকম ভয়াল পরিস্থিতিকে সামনে রেখেই কবি উপরোক্ত কথাগুলি বলেছেন।

Leave a Comment