‘ভাদ্রপদ মাসে যেন পড়ে থাকা তাল।’-ব্যাখ্যা করো। |
উৎস
মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের মঙ্গলকাব্যধারার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী বিরচিত ‘চণ্ডীমঙ্গল’ বা ‘অম্বিকামঙ্গল’ কাব্যগ্রন্থের ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ শীর্ষক নির্বাচিত অংশ থেকে উদ্ধৃত বাক্যটি গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ
কবি এই বিশেষ অংশটিতে কলিঙ্গরাজ্যে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের অসামান্য বর্ণনা ও তার পরিণতির ভয়ংকর ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন। কলিঙ্গরাজ্যে দেখা গিয়েছে ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং এ দুর্যোগ যেন একপ্রকার বিধ্বংসী প্রলয়েরই নামান্তর। আকাশ জুড়ে ঘন মেঘের আচ্ছাদন, রাজ্যে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার।
ব্যাখ্যা
সাতদিনব্যাপী প্রবল বর্ষায় সমগ্র রাজ্য প্লাবিত, জনজীবন বিপর্যস্ত, বিপুল শস্যহানি ঘটেছে। সেই সঙ্গে ভয়ানক ঝড় ও বজ্রপাতে বিপন্নতার প্রকাশ আরও ভয়ংকর। কবি এই অংশে ভয়াবহ শিলাবৃষ্টির বিষয়টিকে উপমা অলংকারের অসাধারণ প্রয়োগের মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন। প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টির ফলে কলিঙ্গরাজ্যের বহু মানুষের বাড়ির বা ঘরের চাল ভেঙে গেছে, এই প্রসঙ্গটি বলার সময় কবি সেই পতিত শিলার আকারের বর্ণনা দিয়েছেন ভাদ্রমাসে মাঠে পড়ে থাকা তাল-এর সঙ্গে তুলনা করে। ভাদ্রমাসে তাল গাছ থেকে প্রায়ই তাল ঝড়ে পড়ে, তার আকার এবং ওজন বেশ বড়ো এবং ভারীই হয়। কলিঙ্গরাজ্যে প্রজাদের ঘরের চাল বিদীর্ণ করে যে শিলা মাটিতে বা মেঝেতে এসে পড়েছে, কবি বলছেন তারও আকার এবং ওজন সেই তালেরই অনুরূপ। এ থেকেই বোঝা যায় সেই রাজ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা কতখানি নিদারুণ। শুধু তাই নয়, এইরকম শিলাপাতের ফলে যে ব্যাপক জীবনহানিও ঘটেছে, তা সরাসরি না বলেও কবি ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন।