‘এখনও সেই ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল/সন্ধ্যার বাতাসে’-কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি? উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

'এখনও সেই ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল/সন্ধ্যার বাতাসে'-কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি? উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো
‘এখনও সেই ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল/সন্ধ্যার বাতাসে’-কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি? উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উক্তিটির প্রসঙ্গ

কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রচিত ‘অন্ধকার বারান্দা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আবহমান’ কবিতা থেকে প্রশ্নোদৃত চরণটি নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য কবিতায় বঙ্গপ্রকৃতির রূপের আবহমানতা বোঝাতে, মাতৃভূমির সৌন্দর্যের অসামান্যতা প্রতিষ্ঠা করতে কবি কবিতার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে লিখেছেন-“এখনও সেই ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল/সন্ধ্যার বাতাসে।”

উক্তিটির তাৎপর্য

“যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া, 
লাউমাচাটার পাশে।

ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, 

ফুল সন্ধ্যার বাতাসে।

–এই চরণগুলি কবি আলোচ্য কবিতায় বারবার ব্যবহার করেছেন। পাঠককে অনুরোধ, উপরোধ কিংবা আবদারের ছলে আত্মবিশ্বাসী কবি বাংলার চিরায়ত রূপের প্রকাশ ঘটিয়েছেন উপরিউক্ত পঙ্ক্তিগুলির মধ্যে। কিন্তু কবিতার শেষে ছোট্ট একটি পরিবর্তন করেছেন তিনি এই আলোচ্য স্তবকটিতে। ‘ছোট্ট একটা ফুল দুলছে’-এর পরিবর্তে তিনি লিখেছেন-‘এখনও সেই ফুল দুলছে’। আর এই সামান্য পরিবর্তনেই বঙ্গপ্রকৃতির রূপের অসামান্যতা তথা আবহমানতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন কবি। আসলে বিদেশ-বিভুঁই বিলাসিতা দিতে পারে, দিতে পারে অর্থ-খ্যাতি-যশ। কিন্তু বাংলার ছোটো ছোটো গ্রামগুলি আবহমান কাল ধরে যে অকৃত্রিম আনন্দের উপাচার সাজিয়ে রাখে, তার কণামাত্র আয়োজন করতে পারে না বলে প্রবাসীরা বারেবারে ‘নিবিড় অনুরাগে’ ফিরে আসে এই বাংলায়। বঙ্গপ্রকৃতির নিসর্গসৌন্দর্য বঙ্গজনকে যে প্রাণের আরাম দেয়, তা পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না বলেই গ্রামবাংলার মাটিকে, হাওয়াকে ভালোবেসে ফেলে মানুষ। তারা হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে প্রাণের টানে। কবি এই চিরন্তন সত্যের প্রকাশ ঘটাতে কবিতার শেষে আলোচ্য স্তবকটিতে সামান্য পরিবর্তন করে উপরিউক্ত চরণটি সহ সমগ্র কবিতাটিকেই তাৎপর্যবহ করে তুলেছেন।

Leave a Comment