স্মৃতিকথা কিভাবে উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়

স্মৃতিকথা কিভাবে উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়
স্মৃতিকথা কিভাবে উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়

ভূমিকা

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে অবিভক্ত ভারত বিভক্ত হয়ে স্বাধীন ভারত ও স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। একদল মানুষ দেশভাগে খুশি হলেও এর ফলে অসংখ্য মানুষকে উদ্বাস্তু সমস্যার নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। সমকালীন মানুষের আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় দেশভাগের যন্ত্রণার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ফলে সেগুলি আধুনিক ইতিহাসচর্চার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদানরূপে বিবেচিত হয়।

দেশভাগ বিষয়ক আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা ও অন্যান্য গ্রন্থ

দেশভাগ বিষয়ক আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা ও অন্যান্য গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল–

শ্রী হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘উদ্বাস্তু’। লেখক পশ্চিমবাংলার উদ্বাস্তু কমিশনার ছিলেন। এটি মূলত তাঁর স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ।

দক্ষিণারঞ্জন বসুর লেখা স্মৃতিকথা হল ‘ছেড়ে আসা গ্রাম’।

নীরদচন্দ্র চৌধুরী রচিত গ্রন্থ ‘অটোবায়োগ্রাফি অফ অ্যান আননোন ইন্ডিয়ান’ (Autobiography of an Unknown Indian) |

জ্যোতির্ময়ী দেবীর লেখা ‘এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা’।

চৌধুরী খালিকুজ্জামানের লেখা ‘পাথওয়ে টু পাকিস্তান’ (Pathway to Pakistan) |

ড. ভীমরাও রামজি আম্বেদকরের ‘পাকিস্তান অর দ্য পার্টিশান অফ ইন্ডিয়া’ (Pakistan or the Partition of India)।

খুশবন্ত সিং-এর লেখা ‘ট্রেন টু পাকিস্তান’ (Train to Pakistan) |

প্রফুল্ল কুমার চক্রবর্তীর লেখা ‘দ্য মার্জিনাল মেন’ (The Marginal Men) ইত্যাদি।

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় দেশভাগের বর্ণনা

এই গ্রন্থগুলি থেকে দেশভাগ সংক্রান্ত আনন্দ, দুঃখ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হত্যা, লুঠতরাজ এবং উদ্বাস্তুদের যন্ত্রণাময় জীবনের কথা জানা যায়।

[1] অনেকে আশা করেছিল দেশ স্বাধীন হলে মানুষের আর দুঃখদুর্দশা বলে কিছু থাকবে না। চালের দাম কম হবে, সবাই খেয়েপরে আনন্দে বাঁচতে পারবে।

[2] দেশ স্বাধীন হল। মানুষ আনন্দে মেতে উঠল।

[3] কিন্তু অসংখ্য মানুষের মনে স্বাধীনতার আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। তারা ‘নিজ ভূমে পরবাসী’ হয়ে গেল- উদ্বাস্তু হয়ে নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে অজানা-অচেনা জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হল। অদ্ভুত বেদনা ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হল তারা। 

[4] স্বার্থান্বেষী একদল মানুষ জমিজমা, ঘরবাড়ি, সম্পত্তির লোভে ধর্মের দোহাই দিয়ে খুন, নারীনির্যাতন ও সম্পত্তি লুঠতরাজে মেতে উঠল।
[5] এর মধ্যেও উদ্বাস্তুদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, বিভিন্নভাবে মানুষের মানবিকতা ও মূল্যবোধের চিত্রও ফুটে উঠেছে।

মূল্যায়ন

ভারতীয়দের কাছে দেশভাগ একটি মিশ্র অনুভূতির ঘটনা। যে অবর্ণনীয় দুঃখদুর্দশার যৎসামান্য অংশ লিখিত আকারে আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথারূপে আমাদের কাছে প্রকাশিত হয়েছে তা সত্যিই বেদনাদায়ক।

Leave a Comment