স্বাধীনতার পরে ভাষার ভিত্তিতে ভারত কীভাবে পুনর্গঠিত হয়েছিল

স্বাধীনতার পরে ভাষার ভিত্তিতে ভারত কীভাবে পুনর্গঠিত হয়েছিল
স্বাধীনতার পরে ভাষার ভিত্তিতে ভারত কীভাবে পুনর্গঠিত হয়েছিল

ভূমিকা

ভারতবর্ষ একটি বিশাল দেশ। এখানে বহু ভাষাভাষী মানুষ পাশাপাশি বসবাস করে। ব্রিটিশ আমলের রাজ্যসীমানা স্বাধীন ভারতের পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য বদলাতে হয়। এর অন্যতম কারণ ছিল ভাষা ও সংস্কৃতির প্রেক্ষিতে রাজ্যসীমা পরিবর্তনের আন্দোলন। 

ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের দাবিতে আন্দোলন

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রশাসনিক কাজে স্থানীয় ভাষার ব্যবহার করলে সুবিধা হবে- এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই ভারতের বিভিন্ন অংশে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের দাবিকে কেন্দ্র করে আন্দোলন গড়ে ওঠে।

আন্দোলনের পটভূমি : ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের জয়পুর অধিবেশনে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের আলোচনার সাপেক্ষে বিচারপতি এস কেদর-এর নেতৃত্বে দর কমিশন গঠিত হয়। এই কমিশন ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের বিরোধিতা করলে সারা ভারত জুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।
অন্ধ্র অঞ্চলে আন্দোলন : ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের ক্ষেত্রে প্রথম তামিল ভাষা অধ্যুষিত মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি থেকে তেলুগু ভাষাভাষী অন্ধ্র অঞ্চলকে পৃথকীকরণের দাবি ওঠে। এই দাবিকে গুরুত্ব না দিলে গান্ধিবাদী নেতা পাত্তি শ্রীরামালু অনশন শুরু করেন (১৯ অক্টোবর, ১৯৫২ খ্রি.)। ৫৮ দিন অনশনের পর তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে অন্ধ্র ভাষামঞ্চের নেতৃত্বে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ১১টি জেলায় বিক্ষোভ শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ডিসেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। তামিলভাষীদের নিয়ে তামিলনাড়ু এবং তেলুগুভাষীদের নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ গঠিত হয় ১ অক্টোবর, ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে।
বোম্বাই প্রেসিডেন্সি : রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের (১৯৫৩ খ্রি.) সুপারিশের ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠন আইন পাস হয় ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে। এরপর বোম্বাই প্রেসিডেন্সির সংযুক্ত মহারাষ্ট্র সমিতি এবং মহা গুজরাট জনতা পরিষদ যথাক্রমে মারাঠিভাষী ও গুজরাটিভাষী রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন করে। গণ আন্দোলন প্রবল হয়ে ওঠে এবং মুখ্যমন্ত্রী মোরারজি দেশাই পদত্যাগ করেন। বহু আলোচনার পর ভারত সরকার ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে বোম্বাই প্রেসিডেন্সিকে ভাগ করে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্য সৃষ্টি করে।
কেরল : মালাবার জেলাকে ত্রিবাঙ্কুর ও কোচিনের সঙ্গে যুক্ত করে কেরল রাজ্য গঠন করা হয়।

পাঞ্জাব: পাঞ্জাবের শিখরা গুরুমুখীভাষী (পাঞ্জাবি) অঞ্চল নিয়ে পাঞ্জাবের সীমানা নির্ধারণ করতে চেয়েছিল। আকালি দল এই দাবিকে সমর্থন জানায়। জনসংঘ হিন্দি ভাষা ও হিন্দুদের সমর্থন করে। শেষে গুরুমুখী, হিন্দি ও পাহাড়ি ভাষার ভিত্তিতে যথাক্রমে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ গঠিত হয় ও রাজ্যসীমা নির্ধারিত হয় ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে।

মূল্যায়ন

এইভাবে ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার দাবিতে রাজ্য গঠনের জন্য গণ আন্দোলন শুরু হয়। সরকারের সদিচ্ছায় নতুন রাজ্যের সৃষ্টি হয় এবং পুরোনো রাজ্যের সীমানা পরিবর্তিত হয়।

Leave a Comment