১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্বাধীন ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্বাধীন ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও
১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্বাধীন ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

ভূমিকা

স্বাধীনতা লাভের পর ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের জন্য দর কমিশন (১৯৪৮ খ্রি.) এবং জে ভিপি কমিটি (১৯৪৮ খ্রি.) নিযুক্ত হয়। এই কমিশন ও কমিটি ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের বিরোধিতা করে। ব্রিটিশ আমলে রাজ্যজয় ও প্রশাসনিক সুবিধার জন্য গড়ে ওঠা রাজ্যসীমার সঙ্গে বহুসংখ্যক দেশীয় রাজ্য যুক্ত হয়। এ ছাড়া অন্যান্য কারণে রাজ্যগুলিতে সমস্যা দেখা দিলে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠন করে।

ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন

দর কমিশন

স্বাধীনতার অনেক আগে জাতীয় কংগ্রেস ভাষাভিত্তিক রাজ্য কমিটি গঠন করেছিল। স্বাধীনতার পর ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠন বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি এস কে দর-এর নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করে (১৭ জুন, ১৯৪৮ খ্রি.)। দর কমিশন তার প্রতিবেদনে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের বিরোধিতা করে।

জে ভিপি কমিটি

জওহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল ও পট্টভি সীতারামাইয়া-কে নিয়ে গঠিত এই কমিটি (১৯৪৮-৪৯ খ্রি.) ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের বিষয়টি খতিয়ে দেখে। কিন্তু আঞ্চলিকতা বৃদ্ধির আশঙ্কায় এই কমিটিও দর কমিশনের অনুরূপ মত প্রকাশ করে।

অন্ধ্র আন্দোলন

অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলির মধ্যে প্রথম তেলুগুভাষী অন্ধ্র অঞ্চলে পৃথক রাজ্যের দাবি ওঠে। তামিল অধ্যুষিত মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি থেকে তেলুগুভাষী অঞ্চল নিয়ে পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশের দাবিতে বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী পাত্তি শ্রীরামালু ৫৮ দিন অনশন করে প্রাণত্যাগ করেন (অক্টোবর, ১৯৫২ খ্রি.)। এরপর অন্ধ্র অঞ্চলে গণ আন্দোলন শুরু হয়। বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় সরকার পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশ গঠন করে (১ অক্টোবর, ১৯৫৩ খ্রি.)।

ভাষাভিত্তিক রাজ্য কমিশন

অন্ধ্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠন করে (১৯৫৩ খ্রি.)। এই কমিশনের সভাপতি ছিলেন সৈয়দ ফজল আলি এবং সদস্য ছিলেন কে এম পানিক্কর ও হৃদয়নাথ কুঞ্জরু। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে এই কমিশন তার প্রতিবেদন পেশ করে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পার্লামেন্টে রাজ্য পুনর্গঠন আইন পাস হয় (১৯৫৬ খ্রি.)। এই আইন অনুসারে ১৪টি ভাষাভিত্তিক রাজ্য এবং ২টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সৃষ্টি হয়।

বোম্বাই প্রেসিডেন্সি

বোম্বাই প্রেসিডেন্সি রাজ্য পুনর্গঠন আইনের এক্তিয়ার বহির্ভূত ছিল। বোম্বাই প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত গুজরাট ও মহারাষ্ট্র পৃথক প্রদেশ গঠনের দাবি তোলে। সংযুক্ত মহারাষ্ট্র সমিতি মারাঠিভাষীদের নিয়ে বোম্বাই শহর-সহ পৃথক মহারাষ্ট্র প্রদেশের জন্য আন্দোলন শুরু করে। একইভাবে মহা গুজরাট জনতা পরিষদ গুজরাটিভাষীদের নিয়ে বোম্বাই শহর-সহ পৃথক গুজরাট প্রদেশের দাবিতে আন্দোলনে নামে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোরারজি দেশাই এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সি ডি দেশমুখ জনমতের চাপে পদত্যাগ করেন। বহু আলোচনার পর কেন্দ্রীয় সরকার মহারাষ্ট্র ও গুজরাট নামে দুটি পৃথক রাজ্য গঠন করে (মে, ১৯৬০ খ্রি.)। বোম্বাই শহর মহারাষ্ট্রের রাজধানী হয় এবং গুজরাটের নতুন রাজধানী হয় আহমেদাবাদ (পরে গান্ধিনগর)।

নাগাল্যান্ড

নাগাল্যান্ডে পৃথক রাজ্যের দাবিতে গণ আন্দোলন না হলেও ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার নাগাল্যান্ডকে পৃথক রাজ্যের মর্যাদা দান করে (১৯৬৩ খ্রি.)।

পাঞ্জাব

পাঞ্জাবের শিখরা গুরুমুখীভাষী (পাঞ্জাবি) অঞ্চল নিয়ে পাঞ্জাবের সীমানা নির্ধারণ করার জন্য এক আন্দোলন গড়ে তোলে। তারা সিং-এর নেতৃত্বে আকালি দল এই আন্দোলনকে সমর্থন জানায়। জনসংঘ হিন্দিভাষী ও হিন্দুদের সমর্থন করে। শেষে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবকে বিভক্ত করে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশ গঠিত হয়।

মন্তব্য

এইভাবে বিভিন্ন পুরোনো রাজ্য ভেঙে নতুন নতুন রাজ্য গড়ে ওঠে। রাজ্যগুলির সীমানা বদলে যায়।

Leave a Comment