সংবিধানে স্বীকৃত ভাষাসমূহ (১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত) কীভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে সে সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো। |
ভূমিকা
ভারত বহু ভাষাভাষী একটি দেশ। অন্যান্য বৈচিত্র্যের মতো ভাষার ক্ষেত্রেও ভারতে বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়।
সরকারি ভাষা কমিশন
১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে সরকারি ভাষা কমিশন গঠিত হয়।
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে সরকারি ভাষা কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে সুপারিশ করা হয় যে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্মে হিন্দি ভাষা বেশি করে ইংরেজি ভাষার জায়গা দখল করুক, যাতে ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে চূড়ান্ত পরিবর্তন ঘটতে পারে। কিন্তু ভাষা কমিশনের দুই সদস্য পশ্চিমবঙ্গের অধ্যাপক সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় ও তামিলনাড়ুর পি সুব্বারায়ান এর বিরোধিতা করেন।
সরকারি ভাষা সম্পর্কে বলা হয়—
[2] ইংরেজি ভাষা ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ (২৬ জানুয়ারি) পর্যন্ত আগের মতো ব্যবহৃত হবে। তারপর ধাপে ধাপে ইংরেজির জায়গা নেবে হিন্দি।
[3] রাজ্যস্তরে সরকারি ভাষা নিয়ে রাজ্য বিধানসভা সিদ্ধান্ত নেবে।
[4] কেন্দ্রীয় সরকারের সরকারি ভাষা হবে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের এবং এক রাজ্যের সঙ্গে অন্য রাজ্যের সরকারের যোগাযোগের ভাষা।
অ-হিন্দিভাষী রাজ্যে বিরোধিতা
সরকারি ভাষা কমিশনের সিদ্ধান্তে দক্ষিণ ভারতে অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলিতে হিন্দি ভাষার বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়। নেহরু দক্ষিণ ভারতের জনগণকে বলেন যে, ‘তাঁরা যদি হিন্দি শিখতে না-চান, তো শিখবেন না।’
সরকারি ভাষা আইন পাস
নেহরুর আশ্বাসের অনুসরণে ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় পার্লামেন্টে সরকারি ভাষা আইন পাস হয়। এই আইনের উদ্দেশ্য হল- ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের পর ইংরেজি ভাষার ব্যবহারের উপর সংবিধান আরোপিত বিধিনিষেধ দূর করা।
সংবিধানস্বীকৃত ভাষা
রাজ্যের সরকারি ভাষা কী হবে তা রাজ্য বিধানসভাগুলি নির্ধারণের অধিকার পায়। বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা তাদের সরকারি ভাষা নির্দিষ্ট করে। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফশিলে ‘সরকারি ভাষা’ হিসেবে ১৪টি ভাষা স্বীকৃতি পায়। এই ভাষাগুলি হল- অসমিয়া, বাংলা, মালয়ালম্, গুজরাটি, হিন্দি, কন্নড়, মারাঠি, ওড়িয়া, কাশ্মীরি, পাঞ্জাবি, সংস্কৃত, তামিল, তেলুগু ও উর্দু।
২০০২ খ্রিস্টাব্দে সংবিধানের অষ্টম তফশিলে – কোঙ্কনি, মণিপুরি, নেপালি এবং সিন্ধি ভাষা সরকারি ভাষার স্বীকৃতি পায়।
২০০৪ খ্রিস্টাব্দে বোরো, ডোগরি, মৈথিলি এবং সাঁওতালি ভাষাও স্বীকৃতি পায়।
মূল্যায়ন
এর ফলস্বরূপ বর্তমানে সংবিধানস্বীকৃত ভারতীয় ভাষার সংখ্যা হল ২২। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এর বাইরে ইংরেজি ভাষা ‘সরকারি ভাষা’ হিসেবে স্বীকৃত।