দেশীয় রাজ্যসমূহের ভারতভুক্তির ক্ষেত্রে সর্দার প্যাটেলের কী ভূমিকা ছিল – প্যাটেলের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও অনমনীয় মনোভাব, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব ভি পি মেনন-এর কূটকৌশল এবং লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সষ্ঠ সহযোগিতায় দেশীয় রাজ্যগুলির সংযুক্তি সহজতর হয়।
তো চলুন আজকের মূল বিষয় দেশীয় রাজ্যসমূহের ভারতভুক্তির ক্ষেত্রে সর্দার প্যাটেলের কী ভূমিকা ছিল পড়ে নেওয়া যাক।
দেশীয় রাজ্যসমূহের ভারতভুক্তির ক্ষেত্রে সর্দার প্যাটেলের কী ভূমিকা ছিল
দেশীয় রাজ্যসমূহের ভারতভুক্তির ক্ষেত্রে সর্দার প্যাটেলের কী ভূমিকা ছিল? |
বল্লভভাই প্যাটেলের ভূমিকা
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ছিলেন দৃঢ় চরিত্রের মানুষ। তাঁকে ‘লৌহমানব’ (Iron Man) নামে অভিহিত করা হয়। চারিত্রিক দৃঢ়তা ও কূটনৈতিক বিচক্ষণতাকে কাজে লাগিয়ে বল্লভভাই প্যাটেল দুটি পর্যায়ে শতাধিক দেশীয় রাজ্যকে ভারতভুক্ত করেন। কোনো কোনো রাজ্য বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করে এই সিদ্ধান্ত নেয়, আবার কোনো কোনো রাজ্য জাতীয়তাবাদী মানসিকতা থেকেই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তবে বেশ কতকগুলি রাজ্য নিজের স্বাতন্ত্রতা বজায় রাখে, আবার ত্রিবাঙ্কুর, ভূপাল, হায়দরাবাদ সরকারিভাবে স্বাধীন মর্যাদার দাবি জানায়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে প্যাটেল
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুন সর্দার প্যাটেল State Department-এর অতিরিক্ত দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এই বিভাগের সচিব হন ভি পি মেনন। দেশীয় রাজন্যবর্গের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ভারতীয় সংহতির পক্ষে কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে সেবিষয়ে প্যাটেল যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন।
প্যাটেলের দৃঢ়তা
প্যাটেল প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সেইসব রাজ্যের রাজন্যবর্গের নিকট ভারতের সঙ্গে সংযুক্তির দাবি জানান, যাদের সঙ্গে ভারতবর্ষের তিনটি বিষয়ে সামঞ্জস্য রয়েছে, যেমন- পররাষ্ট্রনীতি, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ ছাড়াও তিনি প্রচ্ছন্ন হুমকি দেন যে, ১৫ আগস্টের পর তাঁর পক্ষে দেশীয় রাজ্যের জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভবপর হবে না। আবার একইসঙ্গে তিনি এ কথাও বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, ভারতীয় রাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কী কী সুবিধা রয়েছে। দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির জন্য ইন্সট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন (Instrument of Accession) নামে একটি দলিলও সম্পাদিত হয়।
দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতে অন্তর্ভুক্তি
সর্দার প্যাটেলের আবেদনে সাড়া দিয়ে কতকগুলি দেশীয় রাজ্য কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়। যেমন- ভূপাল, কোচবিহার, ত্রিপুরা, মণিপুর প্রভৃতি। আবার এমন রাজ্যও ছিল যেগুলি পার্শ্ববর্তী রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল, যেমন- ময়ূরভঞ্জ রাজ্য উড়িষ্যার সঙ্গে এবং বেনারস যুক্তপ্রদেশের সঙ্গে। সুতরাং বলা যেতে পারে, জুনাগড়, জম্মু ও কাশ্মীর এবং হায়দরাবাদ ছাড়া বাকি সব দেশীয় রাজ্য ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্টের মধ্যে ভারতবর্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়।
মূল্যায়ন
প্যাটেলের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও অনমনীয় মনোভাব, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব ভি পি মেনন-এর কূটকৌশল এবং লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সষ্ঠ সহযোগিতায় দেশীয় রাজ্যগুলির সংযুক্তি সহজতর হয়। প্যাটেল ও মাউন্টব্যাটেনের পরামর্শক্রমে কয়েকটি ছাড়া প্রায় সকল দেশীয় রাজ্য বিশাল ভাতা, খেতাব ও অন্যান্য সুবিধার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে ইন্সট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন (Instrument of Accession) নামক ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করে এবং ভারত ইউনিয়নে যোগদান করে। এই সংগঠকের ভূমিকা পালনের জন্য সর্দার প্যাটেলকে ‘লৌহমানব’ আখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি জার্মানির ঐক্যবদ্ধকরণের পুরোহিত অটোভন বিসমার্কের সঙ্গেও তুলনা করা হয়। কারণ- জার্মানির সংযুক্তিকরণে বিসমার্কের যা ভূমিকা ছিল, ভারতে দেশীয় রাজ্যগুলির সংযুক্তিকরণে সর্দার প্যাটেলের সেই ভূমিকাই ছিল। বিসমার্কের ‘রক্ত ও লৌহ নীতি’-র দৃঢ়তা সর্দার প্যাটেলের প্রতিটি পদক্ষেপের মধ্যে লক্ষণীয়। তাই তাঁকে ‘ভারতের বিসমার্ক’ বলা হয়; যদিও তা সম্পূর্ণ যথার্থ নয়।
আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। দেশীয় রাজ্যসমূহের ভারতভুক্তির ক্ষেত্রে সর্দার প্যাটেলের কী ভূমিকা ছিল -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।