ভারত কী কারণে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়? |
ভূমিকা
দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্যসমূহ
[1] ঐক্য ও সংহতি রক্ষা : ভারতের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম ও মধ্যভাগে দেশীয় রাজ্যগুলি অবস্থিত ছিল। বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত এইসব দেশীয় রাজ্যগুলির সীমারেখা দীর্ঘ ছিল। এইসব রাজ্যগুলি বিভিন্ন শাসকের দ্বারা শাসিত হত। এর মধ্যে কিছু মুসলিম শাসক ছিলেন। আর বেশিরভাগ শাসক ছিলেন হিন্দু। মুসলিম জনসংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যের অস্তিত্ব থাকলেও বেশিরভাগ রাজ্যই ছিল হিন্দু জনসংখ্যাগরিষ্ঠ। এইসব বিভিন্ন ধরনের দেশীয় রাজ্য স্বাধীন হলে সদ্য স্বাধীন ভারতের স্বাধীনতা অর্থহীন হবে এবং ভারতের জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বিপন্ন হবে- এ কথা জাতীয় নেতারা উপলব্ধি করেন। তাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির মাধ্যমে স্বাধীন ভারতের জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করা।
[2] নিরাপত্তা: দেশীয় রাজ্যগুলির বিপুল সংখ্যা এবং তাদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব যেমন একদিকে ভৌগোলিক দিক থেকে ভারতীয় ঐক্য ও সংহতির পক্ষে বাধাস্বরূপ ছিল, তেমনি অন্যদিকে ভারতের নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রেও ছিল বিপজ্জনক। এতগুলি রাজ্য স্বাধীনভাবে সামরিক তৎপরতা শুরু করলে রণচাতুর্ষিক, ভূ-রাজনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকে স্বাধীন ভারতের অস্তিত্ব রক্ষা সম্ভব ছিল না। এজন্য ভারতের ভৌগোলিক নিরাপত্তা রক্ষা অপর একটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল।
[3] শক্তি সম্পদ: দেশীয় রাজ্যগুলি ভারতের মোট আয়তনের ৪৮ শতাংশ এবং ৯ কোটি জনসংখ্যার অধিকারী ছিল। বিস্তৃত রেলপথ, সড়কপথ, নদনদীর বিভিন্ন অংশ, অরণ্য, খনি, সমভূমির বিপুল অংশ দেশীয় রাজ্যগুলির অধিকারে ছিল। এই শক্তিসম্পদের উৎসগুলি স্বাধীন ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। তাই এগুলি দখল করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
[4] দেশভাগজনিত ক্ষতিপূরণ: দেশভাগের কারণে এক-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড এবং প্রায় সাড়ে সাত কোটি জনসংখ্যা ভারত হারায়। দেশীয় রাজ্যগুলি সংযুক্ত করে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ ভূখণ্ড ও জনসংখ্যা ভারত লাভ করে।
[5] জাতীয়তাবাদ: ভারতের জাতীয় নেতারা ‘অখণ্ড ভারত’ নীতি ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ ছিলেন। ভারতের অভ্যন্তরে বহুসংখ্যক স্বাধীন রাষ্ট্রের উপস্থিতি এই নীতি ও আদর্শের বিরোধী ছিল। সদ্য স্বাধীন ভারতের জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনে দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি ঘটে।
[6] প্রজা আন্দোলন: দেশীয় রাজ্যগুলিতে স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। ব্রিটিশ সরকার স্বশাসিত প্রদেশগুলিতে বিভিন্ন শাসনসংস্কার আইন চালু করেছিল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু করে জনগণকে স্বায়ত্তশাসনের উপযোগী করে তোলা হয়। ফলে দেশীয় রাজ্যের প্রজারাও অনুরূপ সুযোগসুবিধার দাবিতে আন্দোলন করলে কংগ্রেস দল তা সমর্থন করে। স্বাধীনতার পর এই বিশাল সংখ্যক জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রদানের জন্য দেশীয় রাজ্যগলিকে ভারতভক্ত করা হয়।