বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা কী ছিল

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা কী ছিল
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা কী ছিল?

ভূমিকা

১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জন বাংলা প্রদেশকে দ্বিখণ্ডিত করেন। একে বঙ্গভঙ্গ বলা হয়। বাংলার জনগণ বঙ্গভঙ্গের তীব্র বিরোধিতা করে। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নারীরা হলেন- সরলাদেবী চৌধুরাণী, কুমুদিনী বসু, লীলাবতী মিত্র, নির্মলা সরকার, হেমাঙ্গিনী দাস প্রমুখ।

আন্দোলনের ধরন

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল মূলত ঘরোয়া বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল প্রধানত–

[1] স্বদেশি দ্রব্যের ব্যবহার করা।

[2] বিদেশি জিনিস ও কাচের চুড়ি ভেঙে ফেলা।

[3] অরন্ধন দিবস পালন করা।

[4] আন্দোলনকারী ও বিপ্লবীদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করা।

আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা

সেসময় খুব কমসংখ্যক নারী প্রকাশ্য সভাসমিতিতে যোগদান করতেন। নারীরা পাড়ায় বা কারোর বাড়িতে জড়ো হতেন। যেমন- মুরশিদাবাদের কান্দিতে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর বাড়িতে সমবেত হয়ে প্রায় ৫০০ মহিলা বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা শুনেছিলেন। তারা বিদেশি দ্রব্য বর্জন, স্বদেশি দ্রব্যের ব্যবহার ও অরন্ধনের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন।

জাতীয়তাবাদী নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমবেতভাবে আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন। তারা গ্রাম ও শহরে সর্বত্র চরকার প্রবর্তন, অর্থসংগ্রহ (লক্ষ্মীর ভাণ্ডার) প্রভৃতি কাজে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।

মা লক্ষ্মী-র ধারণার প্রচার: বঙ্গভঙ্গবিরোধী নারীদের আন্দোলনে দেবী লক্ষ্মীকে রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বলা হয় বঙ্গভঙ্গের জন্য মা লক্ষ্মী দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন, তাঁকে ফিরিয়ে আনার জন্য সকল নারীকে চেষ্টা করতে হবে।

‘মায়ের কৌটা’য় অর্থ ও সম্পদ সংগ্রহ:
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে অর্থসংগ্রহের জন্য ‘মায়ের কৌটা’-র কথা বলা হয়। মায়ের কৌটা বলতে বোঝায় প্রতি বাড়িতে একটি করে কৌটা রাখতে হবে, যে কৌটায় প্রতিদিন দেশমায়ের জন্য একমুঠো করে চাল রাখতে হবে। আবার কোনো নারী বেশি অর্থ দান করলে বা কোনো দুঃসাহসিক কাজ করলে তাকে ‘বঙ্গলক্ষ্মী’ উপাধিও দেওয়া হত।

বিপ্লবীদের সহায়তা:
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বিপ্লবী আন্দোলনের প্রসার ঘটে। ভগিনী নিবেদিতা বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন। তিনি সক্রিয়ভাবে বাংলার বিপ্লবী গুপ্তসমিতির (অনুশীলন সমিতি) সঙ্গে যুক্তও ছিলেন। বাংলার যেসব নারীরা বিপ্লবীদের আশ্রয়দান, গোপন সংবাদ আদানপ্রদান, অস্ত্র লুকিয়ে রাখা ও অস্ত্র সরবরাহের কাজে সাহায্য করতেন তাঁদের মধ্যে বীরভূমের দুকড়িবালা দেবী, ঢাকার ব্রহ্মময়ী সেন, ফরিদপুরের সৌদামিনী দেবী, বরিশালের সরোজিনী দেবীর নাম স্মরণীয়।

মূল্যায়ন

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে সব শ্রেণির নারীরা সমানভাবে অংশগ্রহণ করেনি। মধ্যবিত্ত হিন্দু পরিবারভুক্ত মেয়েদেরই এই আন্দোলনে যোগদানের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তবে এ কথা বলা যায় যে, বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলার নারীসমাজের রাজনৈতিক চেতনা এক উচ্চতর স্তরে উন্নীত হয়েছিল।

Leave a Comment