আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো

আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো
আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো

ভূমিকা

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ গান্ধিজি ৭৮ জন অনুগামী নিয়ে সবরমতী আশ্রম থেকে ২৪ দিনে ২৪০ মাইল পথ অতিক্রম করে ৫ এপ্রিল গুজরাটের ডান্ডিতে পৌঁছোন। ৬ এপ্রিল এখানকার সমুদ্রতীরে গান্ধিজি নিজের হাতে লবণ তৈরি করে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করেন। গান্ধিজির আহ্বানে অসংখ্য নারী আইন অমান্য আন্দোলনে যোগদান করেন।

নারীদের প্রতি গান্ধিজির আহ্বান

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১০ এপ্রিল গান্ধিজি ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ পত্রিকায় আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। গান্ধিজির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের অসংখ্য নারী এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।

নারী সত্যাগ্রহ সমিতি প্রতিষ্ঠা

গান্ধিজির ডান্ডি অভিযানের পরদিন ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মার্চ কলকাতায় নেতৃস্থানীয়া নারীরা ‘নারী সত্যাগ্রহ সমিতি’ প্রতিষ্ঠা করেন।

আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের সক্রিয় ভূমিকা

আইন অমান্য আন্দোলনে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের নারীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। হাজার হাজার নারী নিজেরাই লবণ তৈরি করে আইন অমান্য করেন।

ধরসানা লবণগোলা আক্রমণ: গান্ধিজি সুরাট জেলার ধরসানা-য় সরকারি লবণগোলা দখল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে সরকার ৫ মে তাঁকে গ্রেফতার করে। এই সময় সরোজিনী নাইডু প্রায় ২৫০০ জন সত্যাগ্রহীকে নিয়ে ধরসানা অভিযান করেন। এই অভিযানে নিরস্ত্র জনগণের উপর পুলিশের আক্রমণে ২ জন সত্যাগ্রহী মারা যান ও ৩২০ জন সত্যাগ্রহী মারাত্মকভাবে আহত হন।

সভাসমিতি ও পিকেটিং: নারীরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সভাসমাবেশ, মিছিল, পিকেটিং, বিদেশি পণ্য বয়কট প্রভৃতি ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করেন। নারীরা বিভিন্নভাবে সরকারি আইনগুলি অমান্য করেন।

আন্দোলনের বিস্তার: কলকাতা, দিল্লি, বোম্বাই, মাদ্রাজ, পাঞ্জাব, এলাহাবাদ, লখনউ ইত্যাদি অঞ্চলে নারীরা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। আন্দোলনের অপরাধে দিল্লিতেই প্রায় ১৬০০ নারীকে গ্রেফতার করা হয়।

আন্দোলনের প্রধান নেতৃবৃন্দ: আইন অমান্য আন্দোলনের নেতৃস্থানীয়া নারীরা ছিলেন- সরোজিনী নাইডু, বাসন্তী দেবী, কমলা নেহরু, ঊর্মিলা দেবী, সরলাবালা দেবী, লীলা নাগ, রাজকুমারী অমৃত কাউর প্রমুখ। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে আইন অমান্য আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন- মেদিনীপুরে মাতঙ্গিনী হাজরা, বাঁকুড়ায় সুষমা পালিত, বীরভূমে সত্যবালা দেবী, ঢাকায় আশালতা সেন প্রমুখ।

মূল্যায়ন

আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের দিক থেকে বলা যায়, বোম্বাইয়ের আন্দোলন ছিল সংগঠিত, বাংলার আন্দোলন ছিল উগ্র এবং মাদ্রাজের আন্দোলন ছিল সীমিত। বিদেশি সাংবাদিক ব্রেলফোর্ড ও জর্জ স্লোকোম্বর বলেছেন যে, আইন অমান্য আন্দোলনের কোনো অবদান না থাকলেও নারীমুক্তির ইতিহাসে তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Leave a Comment