ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বাংলার নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো |
ভূমিকা
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৬ এপ্রিল গান্ধিজি ‘হরিজন’ পত্রিকা মারফৎ ব্রিটিশ সরকারকে অবিলম্বে ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই ওয়ার্ধায়, কংগ্রেস কার্যনির্বাহক কমিটি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। আন্দোলনের নেতৃত্ব গান্ধিজির উপর অর্পিত হয়। নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির বোম্বাই বৈঠকে বিপুল ভোটে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। ৮ আগস্ট গভীর রাতে অধিবেশন শেষ হওয়ার পর গান্ধিজি, বল্লভভাই প্যাটেল, জওহরলাল নেহরু, আবুল কালাম আজাদ-সহ কংগ্রেসের কার্যনির্বাহক কমিটির সকল সদস্য গ্রেফতার হন এবং পরদিন সেই খবর প্রকাশিত হলে ভারত ছাড়ো আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্তভাবে শুরু হয়ে যায়। এই আন্দোলনে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা
- দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নারীরা প্রবল উৎসাহের সঙ্গে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
- অরুণা আসফ আলি ও সুচেতা কৃপালিনি মেয়েদের গোপনে সংগঠিত করার কাজে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। সুচেতা কৃপালিনি অহিংস আন্দোলন সংগঠিত করলেও অরুণা আসফ আলি বৈপ্লবিক কাজকর্ম সংগঠিত করেন। অরুণা আসফ আলি কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের শীর্ষস্থানীয়া নেত্রী ছিলেন।
- ঊষা মেহতা গোপনে বেতারকেন্দ্র পরিচালনা করতেন। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলার নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
- মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের মহিলাদের ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মহিলা স্বেচ্ছাসেবিকাদের নিয়ে ভগিনী সেনা গঠন করা হয়।
- ৭৩ বছরের বৃদ্ধা ‘গান্ধিবুড়ি’ নামে পরিচিত মাতঙ্গিনী হাজরা ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে তমলুক থানা দখল করার জন্য শোভাযাত্রা পরিচালনা করার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
- বীরভূমে ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে সংগঠিত করার কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন নন্দিতা কৃপালিনি, রানি চন্দ, এলা দত্ত, সুনীতা সেন, রামপুরহাটের মায়া ঘোষ, সিউড়ির লাবণ্যপ্রভা দত্ত প্রমুখ।
- তা ছাড়া আসামের ১৩ বছরের কিশোরী কনকলতা বড়ুয়া, পাঞ্জাবের গৃহবধূ যোগেশ্বরী ফুকোননী-র নাম ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
মূল্যায়ন
ব্রিটিশ সরকার নিষ্ঠুর দমননীতির মাধ্যমে ভারত ছাড়ো আন্দোলন দমন করে। তবে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানে এই আন্দোলন গণ আন্দোলনের রূপ লাভ করেছিল।