কল্পনা দত্ত স্মরণীয় কেন |
ভূমিকা
ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের ইতিহাসে কল্পনা দত্তের নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। বিপ্লবী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি ছাত্রী সংঘে যোগদান করেন এবং মাস্টারদা সূর্য সেনের অধীনে বিপ্লবী কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ধরা পড়ার পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।
কল্পনা দত্তের জন্ম
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই চট্টগ্রাম জেলার শ্রীপুর-এ এক সাধারণ পরিবারে কল্পনা দত্ত জন্মগ্রহণ করেন।
কল্পনা দত্তের শিক্ষা
কল্পনা দত্ত চট্টগ্রাম থেকে ম্যাট্রিক্যুলেশন পাস করেন। পরে তিনি কলকাতায় আসেন এবং বেথুন কলেজে ভরতি হন।
বিপ্লবী দলে যোগদান
বেথুন কলেজে পড়ার সময় তিনি বিভিন্ন রকম বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। পরে তিনি মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে পরিচিত হন এবং মাস্টারদার প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি-র চট্টগ্রাম শাখার সঙ্গে যুক্ত হন।
বিপ্লবী কার্যকলাপ
কল্পনা দত্ত বাংলার বন্দি বিপ্লবীদের মুক্ত করার জন্য এক পরিকল্পনা করেন। তিনি বিপ্লবী নেতৃবৃন্দের বিচার ও সাজা রুখতে বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি জেল ও কোর্টে ডিনামাইট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিপ্লবীদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর এই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়।
১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করার জন্য কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনের এক সপ্তাহ আগে কল্পনা দত্ত সেখানে পুরুষের ছদ্মবেশে সমীক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়ে যান। তিনি জেলে বসেই পাহাড়তলির ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ ও প্রীতিলতার আত্মহত্যার খবর শোনেন।
গ্রেফতার ও কারাদণ্ড
কল্পনা দত্ত জামিনে মুক্তি পেয়ে মাস্টারদার নির্দেশে আত্মগোপন করেন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশরা তাঁদের গোপন আস্তানা ঘিরে ফেলে এবং মাস্টারদা ও তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে ব্রিটিশবাহিনীর যুদ্ধ হয়। কিন্তু এবারেও কল্পনা দত্ত পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। কল্পনা দত্ত পরে আবার সরকারের বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে গিয়ে তারকেশ্বর দস্তিদারের সঙ্গে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান এবং বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
মৃত্যু
১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। মূল্যায়ন: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে কল্পনা দত্ত একটি স্মরণীয় নাম। দেশের জন্য তাঁর ত্যাগ স্বীকার ও বৈপ্লবিক কার্যাবলি নারীদের উদ্বুদ্ধ করে।