ভারত ছাড়ো আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো। |
ভূমিকা
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনে ছাত্ররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আন্দোলনের বিস্তার
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের ছাত্ররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। বোম্বাই, বাংলা, বিহার, যুক্তপ্রদেশ, উড়িষ্যা, মাদ্রাজ প্রভৃতি অঞ্চলে আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বিভিন্ন অঞ্চলের ছাত্রদের ভূমিকা
বোম্বাই: জাতীয় নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ৯ আগস্ট বোম্বাই শহরে প্রথমে গোয়ালিয়র ট্যাংক ময়দানে ও পরে শিবাজি পার্কে বিশাল জনসভা হয়। এখানে ছাত্ররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আহমেদাবাদ: আহমেদাবাদে ছাত্রদের নেতৃত্বে হরতাল, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, থানায় আগুন লাগানো ইত্যাদি ঘটনার ফলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। বরোদার ছাত্ররাও স্কুল-কলেজে ধর্মঘট পালন করে।
বিহার : বিহারের পাটনায় ছাত্র-আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। ১১ আগস্ট পাটনার মহাকরণে জাতীয় পতাকা তোলা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ ঘটে। এই সংঘর্ষে ৭ জন ছাত্রের মৃত্যু হয়। এরপর বিহারের বিভিন্ন জায়গায় পথ অবরোধ, রেললাইন ও সেতু ধ্বংস করা, টেলিফোন ও টেলিগ্রাফের তার ছিঁড়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
যুক্ত প্রদেশ : বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গান্ধিজির ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ বাণী বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে এলাহাবাদ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিয়েছিল।
বাংলা : কলকাতার ছাত্ররা স্কুল-কলেজ বয়কট করে। তারা সভাসমিতি, মিটিং-মিছিল, পথ অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচির দ্বারা আন্দোলনে শামিল হয়। ১৫ আগস্ট ঢাকায় ছাত্ররা ধর্মঘট করে।
এই সময় ঢাকায় ৫ জন পুলিশের গুলিতে মারা যায়। এর প্রতিবাদে বাংলার স্কুল-কলেজে ধর্মঘট পালিত হয়।
উড়িষ্যা : উড়িষ্যায় ছাত্র-আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে। সরকারি রিপোর্টে উড়িষ্যার ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে ‘পুরোপুরি ছাত্র বিদ্রোহ’ বলে অভিহিত করা হয়।
মাদ্রাজ : মাদ্রাজের স্কুল-কলেজে ছাত্ররা ধর্মঘট করে।
মূল্যায়ন
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে ছাত্রদের যোগদান প্রমাণ করেছিল যে, ভারতবাসী স্বাধীনতার জন্য সমস্ত রকম ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। ছাত্রদের ব্যাপক অংশগ্রহণের ফলে ভারত ছাড়ো আন্দোলন মূলত ছাত্র-যুব আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল।