ভারতে বৈপ্লবিক আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলি লেখো। |
ভূমিকা
ভারতের বিপ্লবীদের ত্যাগ, নিষ্ঠা, আদর্শ, সততা, সংগ্রামী মানসিকতা থাকলেও তারা সম্পূর্ণভাবে সফল হতে পারেনি। মার্কসবাদীদের মতে, গণসংযোগ ও গণবিপ্লব বিষয়ক উদাসীনতাই ছিল বিপ্লবীদের কৌশলগত ত্রুটি।
ভারতে বৈপ্লবিক আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ
বৈপ্লবিক আন্দোলন যেসব কারণে ব্যর্থ হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল–
সাংগঠনিক দুর্বলতা
বিপ্লবীদের গুপ্তসমিতি বা সংস্থাগুলির সংগঠন ছিল অত্যন্ত দুর্বল। এ প্রসঙ্গে অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর দল, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স, মুক্তিসংঘ, ছাত্রীসংঘ-এর কথা বলা যায়। এই দুর্বলতা দূর করার উদ্দেশ্যে তারা অনেকসময় বিদেশি শক্তির সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
মতভেদ ও অন্তর্দ্বন্দ্ব
বিভিন্ন বিপ্লবী দলগুলির মূল লক্ষ্য এক হলেও কার্যপদ্ধতিগত মতভেদ ছিল। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বিপ্লবী আন্দোলনে ঐক্য ও সংহতির অভাব লক্ষ করা যায়।
আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা
বিক্ষিপ্তভাবে ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় সংঘটিত হওয়ার ফলে বৈপ্লবিক আন্দোলন সফলতা পায়নি। মূলত বাংলা, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্রে সম্পূর্ণরূপে বিপ্লবী প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়। বিপ্লবী আন্দোলন কখনোই সর্বভারতীয় ও সর্বাত্মক রূপ পায়নি।
হিন্দুত্বের প্রাধান্য
ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে সমাজের সকল স্তর থেকে বিপ্লবীরা অংশগ্রহণ করেনি। বিপ্লবীদের শতকরা ৯০ ভাগই ছিল হিন্দুসমাজের অন্তর্ভুক্ত। হিন্দু বিপ্লবী নেতাদের দ্বারা বিপ্লবী আন্দোলন পরিচালিত হওয়ায় মুসলিমদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এই আন্দোলন থেকে দূরে থাকে।
গণভিত্তির অভাব
বিপ্লবী আন্দোলনের মূল অংশই ছিল উচ্চবিত্ত, শিক্ষক, কেরানি, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, ডাক্তার শ্রেণির মানুষ। এর পাশাপাশি প্রচুর তরুণ ছাত্র এই বিপ্লবী কার্যকলাপে শামিল হয়। কিন্তু কৃষক ও শ্রমিকশ্রেণিকে নিয়ে গঠিত সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিপ্লবী আন্দোলন থেকে দূরে সরে থাকায় গণভিত্তি এবং গণচেতনার অভাব দেখা দেয়, যার জন্য বৈপ্লবিক আন্দোলন ব্যর্থ হয়।
মূল্যায়ন
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটিশ সরকার ভারত রক্ষা আইন প্রবর্তনের মাধ্যমে বাংলা-সহ সারা দেশে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা কায়েম করলে বৈপ্লবিক আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে।