কীভাবে ফরওয়ার্ড ব্লক’ দলের প্রতিষ্ঠা হয়

কীভাবে ফরওয়ার্ড ব্লক' দলের প্রতিষ্ঠা হয়
কীভাবে ফরওয়ার্ড ব্লক’ দলের প্রতিষ্ঠা হয়?

ভূমিকা

সুভাষচন্দ্র বসু অসহযোগ আন্দোলনের সময় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন। অসহযোগ এবং আইন অমান্য আন্দোলনে গান্ধিজির ভূমিকায় অনেক কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের মতো সুভাষচন্দ্র বসুও ক্ষুব্ধ হন। এই ক্ষোভ বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় এবং শেষে কংগ্রেসের মধ্যে ভাঙন ঘটায়।

কংগ্রেস সভাপতি

১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বসু সভাপতি নির্বাচিত হন। এক্ষেত্রে তিনি কংগ্রেসের বামগোষ্ঠীর সমর্থন পেয়েছিলেন। পরের বছর ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের ত্রিপুরি অধিবেশনেও তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন (১৫৮০-১৩৭৭ ভোটের ব্যবধানে)। প্রতিপক্ষ ছিলেন গান্ধিজির মনোনীত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়া। এই ঘটনায় কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়।

মতভেদ

কর্মসমিতি গঠনের বিষয়ে গান্ধিজির সঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসুর মতভেদ ঘটে। গান্ধিজি তাঁর মনোনীত সদস্য নিয়ে কর্মসমিতি গঠনের পক্ষপাতী ছিলেন। গোবিন্দ বল্লভ পন্থ ও অন্যান্য সদস্যরা তা সমর্থন করেন। কাজ চালানো অসম্ভব বুঝে সুভাষচন্দ্র বসু সভাপতি পদে ইস্তফা দেন (২৯ এপ্রিল, ১৯৩৯ খ্রি.)। ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ তখন কংগ্রেস সভাপতি হন।

বহিষ্কার

কংগ্রেস নেতৃত্ব সুভাষচন্দ্র বসুকে রাজনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত করতে চেয়েছিল। সুভাষচন্দ্র বসু তার বিরুদ্ধে ‘প্রতিবাদ দিবস’ আহ্বান করেন (৯ জুলাই, ১৯৩৯ খ্রি.)। বল্লভভাই প্যাটেল এজন্য একটি শাস্তিমূলক প্রস্তাব আনেন। তাতে বলা হয়, কংগ্রেস কমিটির আগাম অনুমতি ছাড়া কোনো কংগ্রেসি ব্যক্তিত্বই আইন অমান্য করতে পারবে না। ১১ জুলাই সুভাষচন্দ্র বসুকে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা হয়।

ফরওয়ার্ড ব্লক’ গঠন

এর আগেই কংগ্রেসের বামগোষ্ঠীর নেতা নরিম্যান, হরিবিন্নু কামাথ প্রমুখের সাহায্যে সুভাষচন্দ্র বসু ফরওয়ার্ড ব্লক’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন (৩ মে, ১৯৩৯ খ্রি.)। বামসমন্বয় কমিটি গঠনের জন্য তিনি জয়প্রকাশ নারায়ণ ও মানবেন্দ্রনাথ রায়ের কাছে আবেদন জানান। কিন্তু তাঁরা সহযোগিতার বদলে বিরোধিতা করেন।

কর্মসূচি

জমিদারি ব্যবস্থা লোপ, কৃষকের হাতে জমিদান, শিল্পের জাতীয়করণ, সাম্রাজ্যবাদের অবসান, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সামাজিক ন্যায়প্রতিষ্ঠা ছিল এই দলের অন্যতম লক্ষ্য।

মূল্যায়ন

এই দলের শাখা বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও দল তেমন জনসমর্থন পায়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি, ইটালি, জাপানের সাহায্য নিয়ে ভারত থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অবসানের জন্য নেতাজি দেশত্যাগ করেন। তিনি আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠন করে ভারত অভিযান করেন, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। তবু জাতীয় সংগ্রামে সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান অনস্বীকার্য।

Leave a Comment