কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের উদ্ভব হয় কীভাবে

কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের উদ্ভব হয় কীভাবে
কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের উদ্ভব হয় কীভাবে?

ভূমিকা

দাদাভাই নৌরজি তাঁর ‘পভার্টি অ্যান্ড আনব্রিটিশ রুল ইন ইন্ডিয়া’ (Poverty and Unbritish Rule in India) গ্রন্থে বলেন যে, ‘শোষণ বন্ধ না হলে ভারতের দারিদ্র্যমোচন সম্ভব নয়।’ এই তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার বিকাশ দেখা যায় এবং এর ফলে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ভারতের রাজনীতিতে বামপন্থী প্রভাব পড়ে। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে এই প্রভাব আরও বেড়ে যায়। কংগ্রেস ও গান্ধিজির উপর অনেকে ক্ষুব্ধ হন। ফলে বামপন্থী মতাদর্শের ভিত্তিতে কয়েকটি দল গড়ে ওঠে। কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল ছিল এগুলির মধ্যে অন্যতম।

কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের উদ্ভবের কারণ

এই দল প্রতিষ্ঠার কারণগুলি হল–

  • কংগ্রেসের দ্বিতীয় পর্যায়ের (১৯৩২-৩৪ খ্রি.) আইন অমান্য আন্দোলন, ব্রিটিশ সরকারের দমননীতি, বিহারের ভূমিকম্পে প্রাণহানি প্রভৃতি বিষয়ে কংগ্রেসের দৃঢ়তার অভাব।
  • সমাজতন্ত্র সম্বন্ধে গান্ধিজি ও তাঁর অনুগামীদের বিরূপ ধারণা।
  • গান্ধিজির আন্দোলনের পদ্ধতি সম্বন্ধে বামপন্থীদের বিরূপ মনোভাব।
  • কংগ্রেসের বামগোষ্ঠীর শক্তিবৃদ্ধি ইত্যাদি।

নেতৃত্ব

আইন অমান্য আন্দোলনের সময় নাসিক জেলে কংগ্রেসের বামগোষ্ঠীর নেতারা, যেমন– জয়প্রকাশ নারায়ণ, অচ্যুত পট্টবর্ধন, রামমনোহর লোহিয়া, ইউসুফ মেহের আলি, মিনু মাসানি প্রমুখ বন্দি ছিলেন। দম তাঁদের চেষ্টায় আচার্য নরেন্দ্র দেবের সভাপতিত্বে পাটনায় কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টি (CSP) প্রতিষ্ঠিত হয় (এপ্রিল, ১৯৩৪ খ্রি.)। পরে এ কে গোপালন, ই এম এস নাম্বুদ্রিপাদ এই দলে যোগ দেন।

কর্মসূচি

যুক্তপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা সম্পূর্ণানন্দ দলের কর্মসূচি প্রণয়ন করেন। শিল্প-বাণিজ্যের উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ, রাজতন্ত্র তথা জমিদারতন্ত্রের বিলোপ, কৃষকদের হাতে জমিবণ্টন, কৃষিঋণ মকুব, কাজের অধিকার ও শ্রমিকের জন্য ন্যায্য মজুরি এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

বিস্তার

কমিউনিস্ট পার্টির উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় দলের নেতা-কর্মীরা এই দলকে (CSP) মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করে। কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা এই দলে যোগ দেন। পি কে পিল্লাই, এম এ ব্রেলভির নাম এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য। ফলে দক্ষিণ ভারত ও যুক্তপ্রদেশে দলের প্রভাব বৃদ্ধি পায়।

পরিণতি

দলের তৃতীয় সম্মেলনে (১৯৩৬ খ্রি.) সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে কোনো গণ আন্দোলন হয়নি। দলের একাংশ গান্ধিবিরোধী হলেও সবাই তা ছিলেন না। দল সারা ভারতে সংগঠন তৈরি করতে পারেনি। দলের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত ছিল। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে দল কংগ্রেসকে সমর্থন করে। ফলে কমিউনিস্টরা দলত্যাগ করে। দলের আদর্শ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা ছিল না। ফলে দলটি অল্প সময়ের মধ্যেই ভেঙে যায়।

Leave a Comment