তেভাগা আন্দোলনের গুরুত্ব ও চরিত্র সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো। |
ভূমিকা
১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ফ্লাউড কমিশনের রিপোর্টে দেখানো হয় যে, বাংলার বহু কৃষক পরিবারের জমিতে কোনো অধিকার নেই। এই কমিশনের সুবাদে ভাগচাষিরা তিন ভাগের এক ভাগ ফসল জমা দেবে বলে স্থির হয়, যা তেভাগা নামে পরিচিত। কিন্তু জমিদার বা সরকার কেউই এটা মানতে রাজি ছিল না। এই অবস্থায় কমিউনিস্টদের কৃষক সংগঠন বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষকসভা ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তেভাগা আন্দোলন শুরু করে।
নেতৃত্ব
উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির দেবীগঞ্জ এলাকায় ‘বুড়িমা’-র নেতৃত্ব প্রায় প্রবাদে পরিণত হয়েছিল। এ ছাড়া দিনাজপুরের গৃহবধূ জয়মণি, দীপেশ্বরী, কাকদ্বীপের বাতাসী, মহিষাদলের বিমলা মণ্ডল প্রমুখ মহিলার নেতৃত্ব এই আন্দোলনকে অন্য মাত্রা দিয়েছিল। তেভাগা আন্দোলন মূলত কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। তাই এই আন্দোলনের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ ও পরিচালনার ফলে তারা কৃষকশ্রেণির কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শিক্ষিত ও রাজনীতিসচেতন কমিউনিস্টদের প্রভাবে কৃষকরাও দেশের রাজনীতিসচেতন গোষ্ঠীতে পরিণত হয়।
গুরুত্ব
ডি এন ধানাগাড়ে তাঁর ‘পেজেন্ট মুভমেন্ট ইন ইন্ডিয়া’ (Peasant Movement in India) গ্রন্থে লিখেছেন, ভারতের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে এই আন্দোলন এক অন্য মাত্রা যোগ করেছিল। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ব্যাপকভাবে নারীদের নেতৃত্বের সক্রিয়তা লক্ষ করা যায়। সাম্প্রদায়িকতার যে কৌশল ব্রিটিশরা এদেশ শাসনে ব্যবহার করেছিল তা এই আন্দোলন ব্যর্থ করে দিয়েছিল। এই আন্দোলন জাতি-ধর্মের গণ্ডি অতিক্রম করে সমস্ত ধরনের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে। যদিও এই আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল তবুও পরবর্তীকালে ভূমিস্বত্ব আইন, বর্গাদারদের অধিকার ও জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের প্রশ্নে এই আন্দোলনের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।
চরিত্র
তেভাগা আন্দোলনের মূল চরিত্র হল যে, এটি সামগ্রিকভাবেই একটি আন্দোলন। এই আন্দোলনের সংগঠকদের মূল দাবি ছিল ফসলের তিন ভাগের দু-ভাগ বর্গাদার বা ভাগচাষিদের প্রাপ্য এবং কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ করতে হবে। তেভাগা আন্দোলন-এর সূত্র ধরে ‘টংকা আন্দোলন’ জোরদার করা হয়। ‘টংকা’ বলতে খাজনাকে বোঝানো হত। লাঠি, তির, ধনুক ছিল এই আন্দোলনকারীদের মূল অস্ত্র। একদিকে মহিলারা কাঁসর-ঘণ্টা বাজিয়ে আন্দোলনকারীদের আক্রমণ সম্পর্কে সচেতন করতেন অন্যদিকে নিজেরাও বঁটি, লাঠি, ঝাঁটা নিয়ে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন।