বারদৌলি সত্যাগ্রহ টীকা লেখ
|
ভূমিকা
গুজরাটের সুরাট জেলার একটি তালুক ছিল বারদৌলি। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এখানে অহিংস পথে সত্যাগ্রহ আদর্শের উপর ভিত্তি করে খাজনা বা রাজস্ব বন্ধ সংক্রান্ত একটি আন্দোলন হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ও মহাত্মা গান্ধি।
কারণ
কংগ্রেস কোথাও কোথাও কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানালেও কখনো জমিদারবিরোধী কৃষক সংগ্রামকে অনুমোদন করেনি। মহাত্মা গান্ধিও যতদিন সম্ভব খাজনা বন্ধের আন্দোলনকে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। শেষপর্যন্ত অবশ্য খাজনা বন্ধ আন্দোলনের ক্ষেত্র হিসেবে বারদৌলিকে বেছে নেন। বারদৌলি তালুকে গ্রাম ছিল ১৩৭টি। জনসংখ্যা প্রায় ৮৭,০০০ জন। এখানকার অধিবাসী ছিল কুনবি ও পাতিদার কৃষক- যারা জমির মালিক ছিল। আর কালিপরাজ যারা বংশপরম্পরায় খেতমজুর বা ভাগচাষি, তারা ছিল স্থানীয় জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ।
এই সময় তুলোর দাম কমে গিয়েছিল। তবু বোম্বাই সরকার ২২ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধি করলে পরিস্থিতি কৃষকদের কাছে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
নেতৃত্ব
গান্ধিজির কিছু কর্মকেন্দ্র এই অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যেমন- পাতিদার যুবক মণ্ডল, পাতিদার আশ্রম ইত্যাদি। এখানে ‘প্যাটেল বন্ধু’ নামে পত্রিকাও প্রকাশিত হয়। আর ছিলেন কুনবরজি মেহতা ও কল্যাণজি মেহতা নামে দুই জন নেতা, যারা বল্লভভাই প্যাটেলের কাছে খাজনা বন্ধ আন্দোলনের প্রস্তাব দেন। প্যাটেলও আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে রাজি হন।
আন্দোলনের সূচনা
অতঃপর ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে বারদৌলির পাতিদার ও কুনবি কৃষক এবং কালিপরাজ মজুররা একযোগে খাজনা বন্ধ আন্দোলন শুরু করে। সরকার আন্দোলনকারীদের প্রচুর সংখ্যক গবাদিপশু বাজেয়াপ্ত করে, জমি দখল করে। সরকার আন্দোলন ভাঙার জন্য কালিপরাজদের সহজ শর্তে জমি দেওয়ার প্রস্তাব দিলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। সরকার জাতপাতের বিষয়টি দিয়ে আন্দোলন দুর্বল করার চেষ্টা করে। তখন প্যাটেল ও আঞ্চলিক নেতারা ভজন গান ও ধর্মীয় আবেদনের মাধ্যমে ঐক্য বজায় রাখেন। কালিপরাজদের দেবতা সিলিয়া ও সিমালিয়ার সেবকরূপে গান্ধিজিকে তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া কালিপরাজদের স্বল্প পোশাকের সঙ্গে গান্ধিজির পোশাকের মিল তুলে ধরে তারা। দৈনিক ‘সত্যাগ্রহ’ পত্রিকায় কৃষক ও কৃষিমজুরদের ঐক্য বজায় রাখার উপর জোর দিয়ে প্রচার চালানো হয়।
বিস্তার
বারদৌলি আন্দোলন একটি জাতীয় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আহমেদাবাদের কর্মীরা ১ আনা করে মোট ১৩০০ টাকা চাঁদা তোলে। বোম্বাই-এর ব্যবসায়ী সমিতি এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে মধ্যস্থতার চেষ্টা করে; কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। প্রতিবাদে বোম্বাই কাউন্সিলের বণিকসভার প্রতিনিধি লালজি নারায়ণজি পদত্যাগ করেন। এসময় বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন গিরনি-কামগড় ইউনিয়ন বোম্বাইয়ে শিল্প ধর্মঘট করে।
তদন্ত কমিটি
বারদৌলির সঙ্গে বোম্বাইয়ের আন্দোলন মিশে যাবে এই আশঙ্কা থেকে সরকার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ম্যাক্সওয়েল ব্লুমফিল্ড-এর তদন্ত কমিটি স্বীকার করে যে, বারদৌলির রাজস্ব নির্ধারণ ত্রুটিপূর্ণ। গুজরাটের অন্যান্য অঞ্চলেও যে রাজস্ব বৃদ্ধি করা হয়েছে তা ভ্রান্ত।
পরিণতি
বারদৌলির বর্ধিত রাজস্ব কমিয়ে দেওয়া হয়। সমগ্র গুজরাট ও মহারাষ্ট্র জুড়ে বল্লভভাই প্যাটেল রাজস্ব বিষয়ে একটি অভিযানের পরিকল্পনা করেন। বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে ভূমি লিগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। সরকার রাজস্ব সংশোধন মুলতুবি রাখে। খেদায় ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের রাজস্ব হার বজায় থাকে। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আর এখানে রাজস্ব বৃদ্ধি করা হয়নি। এভাবে বারদৌলি সত্যাগ্রহ সফল হয়।